কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার জটে নৌ- চলাচলসহ বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে

 

 

কাপ্তাই হ্রদে কচুরিপানার জট

আমার বাংলা টিভি ডেস্ক /রিপন মারমা (রাঙ্গামাটি): রাঙ্গামাটি কাপ্তাই কৃত্রিম হ্রদে হঠাৎ অতিরিক্ত কচুরিপানার ভয়াবহ জট সৃষ্টি হওয়ায় কৃত্রিম হ্রদ পথে ইঞ্জিন চালিত বোট নৌকা ও স্ট্রিমার চলাচল প্রতিদিন বিঘ্ন ঘটছে ফলে হ্রদ নির্ভর ৬ উপজেলার যোগাযোগ ব্যাবস্হা প্রায় বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।

প্রতিবছর বর্ষায় কমবেশি কচুরিপানার সমস্যা থাকলেও এ বছর বর্ষায় মেজুরাম, মারিশ্যা, ছোট হরিনা, বড় হরিনাসহ দুর্গম বিভিন্ন পাহাড়ী ঢলের সাথে বিভিন্ন আবর্জনা ও কচুরিপানা কাপ্তাই হ্রদে ভেঁসে এসে পানি পথে জট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সৃষ্ট এ সমস্যার কারণে ব্যাহত হচ্ছে সকল কার্যক্রম। অনুসন্ধানে জানা যায় জেলেদের হ্রদে জাল ফেলতেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আবার কচুরিপানা ভেসে পাড়ে চলে আসায় ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা তীরে ভেড়াতে বেগ পেতে হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকরাও হ্রদের ঘুরে বেড়াতে এসে বিপাকে পরছেন তাই এই বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেতে জরুরি ভাবে কচুরিপানা অপসারণ সহ স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা

এদিকে, হ্রদ ব্যবহার করে সব প্রতিষ্ঠানই রাজস্ব আয় করলেও কচুরিপানা পরিষ্কার করতে এককভাবে দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছে না কেউ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর প্রথমদিকে তেমন একটা কচুরিপানার সমস্যা ছিল না। তিন দশক ধরে হ্রদে কচুরিপানা দিন দিন বাড়ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কচুরিপানা দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ। দিনে এটি প্রায় দ্বিগুণহারে বাড়ে। কাপ্তাই হ্রদে পদ্ধতিতে মাছ চাষ বৃদ্ধি পাওয়ার পর ও ঘোনায় মাছ চাষের ফলে কচুরিপানা বেড়েছে। পাশাপাশি ভারতের মিজোরাম থেকে উজানে কচুরিপানা চলে আসায় হ্রদের সঙ্গে মিশে গিয়ে বিশাল স্তূপাকারে কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

হ্রদের এ জঞ্জাল পরিষ্কারে একক দায় নিতে রাজি নয় কেউ। হ্রদে কচুরিপানা পরিষ্কারে কারও একক দায়িত্ব নেই জানিয়ে এ ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

হ্রদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘হ্রদে কচুরিপানা এসে প্রজেক্টের সামনে জমা হলে আমরা সেগুলো পরিষ্কার করে নৌ যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখি। ট্রাক বোট দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের কচুরিপানা টেনে সরিয়ে ফেলা হয়। আমার প্রজেক্টের এলাকার বাইরে অন্যান্য এলাকা সুবলং, কান্দাইরমুখ, বরকল, লংগদুর, জুরাছড়ি কচুরিপানা পরিষ্কার করার মতো লোকবল আমার নেই।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক নয়ন শীল বলেন, আগে এ সমস্যা বেশি না হলেও এবার সমস্যা তীব্র হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঢাকায় ঢাকা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এরই মধ্যে নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় লঞ্চ মালিক সমিতির মাধ্যমে কিছুটা পরিষ্কার করা সম্ভব হলেও পুরোপুরি এখনও পরিষ্কার করা যায়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখা। আমরা সেটার চেষ্টা করছি, তবে হ্রদ কচুরিপানা মুক্ত রাখতে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বর্ষার পানিতে হ্রদে পানি না বাড়লেও মিজোরাম থেকে পানি আসায় হ্রদের পানি বেড়েছে। হয়তো সেদিক থেকে কিছু কচুরিপানা এসেছে। তবে আমরা লঞ্চ মালিক সমিতির সহযোগিতায় সুবলং যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা সরিয়ে ফেলেছি।

তিনি বলেন, নির্দিষ্টভাবে হ্রদের কচুরিপানা পরিষ্কারের দায়িত্ব এককভাবে কারো না থাকলেও যেখানে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে আমরা সেখানে সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি।

গত মঙ্গলবার চট্রগ্রাম সীতাকুণ্ড এলাকা থেকে কাপ্তাই হ্রদে বেড়াতে এসে বিপাকে পড়েন বেশ কয়েকজন পর্যটক।
এর পর বিকাল থেকে হ্রদের মধ্যে কচুরিপানা জটে আটকে পড়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হলেও রেহাই পাননি। পরে রাতের জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল দিলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে শহরে আনেন।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, হ্রদের কচুরিপানা পরিষ্কারের দায়িত্ব কার, এ বিষয়টা আমার জানা নেই। তবে কচুরিপানা থেকে সৃষ্ট দুর্ভোগ থেকে জনসাধারণকে মুক্ত করতে যেখানে যে সমস্যা আমরা আপাতত সেই সমস্যা সমাধান করছি। এছাড়া স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কচুরিপানা পরিষ্কারের দায়িত্ব থাকলেও এতো বড় হ্রদের কচুরিপানা পরিষ্কারের মতো অতো সামর্থ্য তাদের নেই।

তিনি আরও বলেন, স্থায়ীভাবে হ্রদ থেকে কচুরিপানা মুক্ত করার জন্য গবেষণার প্রয়োজন। গবেষণা থেকে যে উপাত্ত পাওয়া যাবে সেটা সামনে রেখে হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটির সমাধান সম্ভব।