আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যে যার মত করেই দখল করে যাচ্ছে জলাধার

দূষণ আর দখলে বিলুপ্তির পথে চট্টগ্রাম নগরীর অনেক জলাধার। ছবিঃ (আঞ্চলিক নামঃ উতুর পুকুর নামে পরিচিত) ভরাট করা হচ্ছে। 

আমার বাংলা টিভি ডেস্কঃ একদিকে দূষণ আর অন্যদিকে দখল। এভাবেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর পুকুর ও জলাধার গুলো। বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় দখলদাররা এসব পুকুর ও জলাধার ভরাট করছে।

এই যেমন ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ড, ডবলমুরিং থানাধীন ঝর্ণাপাড়া, নজীর আহমদ সড়কের ঐতিহ্যবাহী উত্তর পুকুরটিও (আঞ্চলিক নামঃ উতুর পুকুর নামে পরিচিত) ভরাট করা হচ্ছে। পুকুরটির ১৭ গন্ডার মধ্যে ৪ গন্ডা ভরাট করে দোকানপাট এবং বসতবাড়ী নির্মাণ করা হয়েছে অনেক আগেই। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাকী ১৩ গন্ডা পুকুর ভরাট কার্যক্রম শুরু করেছে একটি চক্র। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি নেতা হাজ্বী মাহাবুব আলম, বিএনপি নেতা নুর মোহাম্মদ এবং নুর মোহাম্মদের ছেলে ইমতিয়াজ (আওয়ামী সমর্থক)।

হাজ্বী মাহাবুব আলম বিগত সময় হাবিব সওদাগরের বাড়ীতে একটি পুরনো পুকুর ভরাট করে। সেখানেও নির্মাণ করা হয় ঘর। অন্যদিকে সাবেক কাউন্সিলর শামসুল আলমের বাড়ীর পুকুরটিও ভরাট করে সেখানেও নির্মাণ করা হচ্ছে বসতঘর, দোকানপাট, দালান কোঠাসহ নানা স্থাপনা। এখন বুঝার কোন উপায় নেই যে, সেখানে একটি পুকুর ছিলো।

পুকুর ভরাট করে ঘর-বাড়ী নির্মাণ করা হচ্ছে। 

নজীর আহমেদ রোডে পাচঁটি পুকুরের মধ্যে দুইটি পুকুর ভরাট করে ঘর-বাড়ী নির্মাণ হয়ে গেছে। বাকী তিনটির মধ্যে উতুর পুকুরটি ভরাট করার সব প্রস্তুতি শেষ। যেকোন সময় রাতের আধারে এটিও ভরাট হয়ে যাবে, এমনটি আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এভাবেই একে একে সব পুকুর ভরাট করার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে অত্র এলাকায়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে চরম ভোগান্তি পড়তে হয় এলাকার মানুষদের।

অত্র এলাকার বাসিন্দা জসিম জানান, ছোটবেলায় আমরা এই ঐতিহ্যবাহী পুকুরে সাঁতার কেটে বড় হয়েছি, সাঁতার শিখেছি। আশপাশে মানুষরা গোসল করতো। এখন সেখানে গোসল করা যাচ্ছে না। কারণ দূষণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা তো ছোটবেলায় পুকুরে গোসল করে সাঁতার শিখেছি। নতুন প্রজন্ম তো পুকুর কি, সাঁতার কি সেটাও জানবে না। এভাবে যদি একের পর এক পুকুর ভরাট হয় যায় তাহলে এক সময় পুকুর নামটিও হারিয়ে যাবে। তাই এবিষয়ে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন তিনি।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০ (সংশোধিত) অনুযায়ী, জলাশয় ভরাট করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া জলাশয় সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী, দীঘি ভরাটও নিষিদ্ধ রয়েছে। বিশেষ করে ভূমির কেকর্ডে (আরএস, বিএসে কোন জলাশয় থাকলে তা কোনভাবেই ভরাট করা যাবে না।

এত আইন আর নিয়ম থাকলেও, কেউ মানছে না সেই নিয়ম। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যে যার মত করেই দখল করে যাচ্ছে জলাধার। ভরাট করছে পুকুর। এমন অবস্থায় যদি প্রশাসন নিরব থাকে, তাহলে এটি হতেই থাকবে। তাই সবার প্রত্যাশা থাকবে, ঐতিহ্য আর বর্ষায় জলাবদ্ধার ভোগান্তিসহ নানা বিষয় বিবেচনা করে, এসবের বিরুদ্ধে কঠোর হবে প্রশাসন।