আমার বাংলা টিভি ডেস্ক: অবশেষে আন্দোলনের মুখে বন্ধ হয়ে গেল হাটহাজারী পার্বতী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্টিতব্য বিতর্কিত মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহেদ আরমান মেলার কার্যক্রম বন্ধ করেন।
অনুমোদন ঘিরে বিতর্ক:
‘বাংলাদেশ বেনারসি মুসলিম অ্যান্ড জামদানি সোসাইটি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসনের অনুমোদনের দাবি করে হাটহাজারী সদরের ঐতিহ্যবাহী পার্বতী স্কুল মাঠে মেলার স্টল ও স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরিবেশবাদী, ক্রীড়া, মানবাধিকার এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোও এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
জনমত গঠনে সোচ্চার জনসাধারণ:
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে গণস্বাক্ষর, প্রতিবাদ সভা এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জনমত তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত জনচাপের মুখে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনকে মেলা বন্ধের নির্দেশ দেন।
জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত:
মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিনের সভাপতিত্বে আন্দোলনরত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহেদ আরমান, উপজেলা প্রকৌশলী জয়শ্রী দে, হাটহাজারী পৌরসভা ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক আব্দুর শুক্কুর, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সচিব আসলাম মোর্শেদ, প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম শিমুল, জাগৃতির সভাপতি মো. ওসমান, সিএমইউজে’র সদস্য এম নাজমুল ইসলাম, হাটহাজারী প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তালেব প্রমুখ।
ঐতিহ্যবাহী মাঠ রক্ষার পক্ষে ঐকমত্য:
বক্তারা বলেন, পার্বতী স্কুল মাঠটি কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ নয়; এটি হাটহাজারীর ক্রীড়া ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যের প্রতীক। এখানে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের খেলাধুলা, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সরকারি বিভিন্ন আয়োজন হয়ে থাকে। মেলা আয়োজনের ফলে মাঠের স্বাভাবিক গঠন, ঘাস, মাটি, এবং ক্রীড়া চর্চায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল।
প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা:
বক্তারা মেলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ধন্যবাদ জানান পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, বিএইচআরএফ মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান, হাটহাজারী প্রেস ক্লাব ও স্থানীয় সাংবাদিকদের।
বিকল্প স্থানের দাবি:
বক্তারা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ শুধুই খেলাধুলা ও ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক বিকাশের জন্য ব্যবহৃত হওয়া উচিত। বাণিজ্যিক মেলা কিংবা অপ্রাসঙ্গিক অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা নির্ধারিত স্থানে আয়োজন করাই হবে যথাযথ সিদ্ধান্ত।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন :
হাটহাজারী খেলোয়াড় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল সিদ্দিকী, জাগৃতির সম্পাদক সোহেল রানা, ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সচিব জসীম উদ্দিন বাবুল, ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারি আলী আজম, কামালপাড়া যুব সংঘের সভাপতি মো. ওসমান, জিয়াউদ্দিন মিজান, মোহাম্মদ রায়হান, যুব ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সাইমুন, কাজী এরশাদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বগণ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে মেলা আয়োজন চিরতরে বন্ধের জন্য বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। www.amarbangla.tv