সৌন্দর্যের লীলাভূমি কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্ক ও কাপ্তাই ভ্রমণ গাইড

অপরুপ সবুজ প্রকৃতি ন‌্যাশনাল পার্ক। ছবিঃ আমার বাংলা টিভি।   

আমার বাংলা টিভি ডেস্ক/ রিপন মারমা রাঙ্গামাটি (কাপ্তাই) : দেশের বৃহত্তম কাপ্তাই লেক, সবুজ বৃক্ষ আচ্ছাদিত উঁচু-নীচু পাহাড়,শান্ত শীতল জলের কর্ণফুলী নদী, গভীর মমতা আর ভালবাসায় গড়া আদিবাসীদের বর্ণিত জীবন ধারা সব মিলিয়ে অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিলিত আহবান।এত সৌন্দর্য এক জায়গায় মিলিত হয়েছে দেশের যে স্থানটিতে তার নাম কাপ্তাই।

প্রাকৃতির প্রায় সব রুপ-রং যেন এখানে এসে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে সেই সৌন্দর্যের সুধা পান করতে সারা বছরই প্রাকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের ভীর লেগে থাকে কাপ্তাইয়ে। রাঙ্গামাটি কাপ্তাই একটি উপজেলা হলেও চট্টগ্রাম শহরের সাথে কাপ্তাইয়ে যোগাযোগ খুবই সহজ। মাত্র দুই ঘন্টা দশ মিনিট দুরত্ব আর দুরত্ব পেরুলেই হারিয়ে যাওয়া সম্ভব অপূর্ব সৌন্দর্য প্রাকৃতিক মাঁঝে।

কাপ্তাইয়ে গেলে যেসব স্থান আপনার পছন্দ হবে, সেগুলো সম্পর্কে আমার বাংলা টিভিকে বিস্তারিত জানিয়েছেন মোঃ জসিম উদ্দিন, কাপ্তাই ন‌্যাশনাল পার্ক, কাপ্তাইয়ে বেড়াতে গেলে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষন থাকে কাপ্তাই ন‌্যাশনাল পার্কে ঘিরে।বাংলাদেশ বন বিভাগের পার্বত‌্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বন বিভাগের অধীনে কাপ্তাই ন‌্যাশনাল পার্কটি। পার্কে প্রবেশ করতেই পাখি কিচি-মিচি বানরের লম্ফ ঝম্প আর মাঁঝে মধ‌্যে বন‌্য হাতি আর নানান প্রজাতীর বন‌্য প্রাণীর আনাগোনা যে কোনো পর্যটকদের অভিভূত করবে।

ছবিঃ রিপন মারমা। 

কাপ্তাইয়ে ওয়াগ্গা ইউনিয়ন সীতার ঘাট থেকে কাপ্তাই ন‌্যাশনাল পার্ক শুরু এবং কাপ্তাই লেক ও কর্ণফুলীর নদীর পাশ ঘেঁষে এই পার্ককে অপূর্ব সুন্দর এক সীমানা। কোন ধরণের পূর্বানুমতি ছাড়াই কাপ্তাই ন‌্যাশনাল পার্কে বেড়াতে পারবেন যে কোন পর্যটক।

সেসময় মোঃ জসিম উদ্দিন আরো বলেন, কিন্তু সাবধানে চলা ফেরা করতে হবে বন‌্য হাতির আক্রমনে এখানে প্রতি বছরে অনেক মানুষ মারা যায় সে দিকে একটু নজর দারী রেখে বেড়াতে পারবেন। কাপ্তাই ন‌্যাশানাল পার্ক সবার জন‌্য উন্মুক্ত তবে গভীর বনে প্রবেশ, থাকা খাওয়া এবং সংরক্ষিত বনের অভ‌্যান্তরে যাতায়াতের জন‌্য বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এই অনুমতিও মিলবে খুব সহজে।

কাপ্তাই ন‌্যাশনাল পার্ক দায়িত্ব প্রাপ্ত পার্বত‌্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুব তাকে একাধীক বার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসীব করেনি।

কাপ্তাই বেঙছড়ি মারমা পাড়া কারবারি মংসুইহ্লা মারমা তিনি জানিয়েছেন, কাপ্তাই ন‌্যাশানাল পার্ক বাংলাদেশে অত‌্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মন্ডিত এলাকা। এর পার্কে রয়েছে পাহাড়, নদী, লেক, আর প্রাকৃতিক বৈচিত্রময় অপূর্ব সংমিশ্রণ।সাধারণ পর্যটকের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীক ,গবেষক এবং জীব বৈচিত্র সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়োজিতরা বিভিন্ন গবেষণা কাজে কাপ্তাই ন‌্যাশনাল পার্কে আসেন।

কাপ্তাই সড়ক ন‌্যাশনাল পার্কে ভিতরে পাহাড়ের উপরে বন বিভাগের “বনফুল” নামক অপূর্ব সুন্দর একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। পূর্বানুমতি নিয়ে বুকিং সাপেক্ষে এই বিশ্রামাগারে থাকা ও ছুটি কাটানো যেতে পারেন। এই বিশ্রামাগার বারান্দায় থেকে দেখা যায় ন‌্যাশনাল পার্কে সবুজ প্রকৃতি আর শীতল জলের বহমাণ কর্ণফুলী নদী। এছাড়া পার্কে রয়েছে সুইচ্চ পর্যবেক্ষন টাওয়ার। এখানে উঠে কাপ্তাই উপজেলার সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য এক নজরে উপভোগ করা যায়। পাহাড় ঘেরা নীল জলের কাপ্তাই হ্রদ:১৯৫৬ সালে কাপ্তাই পানি বিদ‌্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন‌্য কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেয়া হয়। বাঁধ দেয়ার ফলে সৃষ্ঠির হয় দেশের বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদ।

কাপ্তাই আর রাঙ্গামাটির মাঁঝখানে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে স্ফটিক নীল জলের কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই (কর্ণফুলী) হ্রদ বা কাপ্তাই লেক। পানি থেকে বিদ‌্যুৎ উৎপাদনের জন‌্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেয়ার ফলে এই হ্রদ সৃষ্ঠি হলেও এ হ্রদের কৃত্তিমতা স্বাভাবিক সৌন্দর্যকেও ছাড়িয়ে গেছে।

লুসাই পাহাড়ের অদূরে সলিল কন‌্যা কর্ণফুলির স্বাভাবিক চলার পথে চঞ্চলা পায়ের ছন্দয়ময় গতিতে যেন বিচ্ছেদের নূপুর পরানো হয়েছে। কখনো দুই পাহাড়ে মাঁঝখানে সরুই খাড়াপথ আবার কখনো বা দিগন্ত বিস্তৃত অথই জলরাশি। উঁচু পাহাড়ে চুড়াই বিভিন্ন গোত্রের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিচিত্র নিবাস। নিজস্ব সংস্কৃতিতে তৈরি বিচ্ছিন্ন এ জনপদগুলো আরো আকর্ষণীয়।

কাপ্তাই হ্রদের ভ্রমণের বা নৌবিহারেও স্থান গুলির মধ‌্যে কাপ্তাই ,বিলাইছড়ি, ধুপ‌্যানী ঝর্ণা, গাছ কাটা ঝর্ণা, রাঙ্গামাটি, সুভলং ঝর্ণা, জুড়াইছড়ি, হরিণছড়া, রাঙ্গামাটি চাকমা রাজবাড়ী, প্রভৃতি স্থান উল্লেখ‌্যযোগ‌্য নুন‌্যতম খরচের কাপ্তাই লেকের নৌবিহার করা সম্ভব। কাপ্তাই জেটিঘাট কাপ্তাই নৌবিহার শহীদ মোয়াজ্জেম নৌঘাট সহ লেকের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইঞ্জিন বোট সাম্পান ডিঙি নৌকা প্রভূতির মাধ‌্যমে কাপ্তাই লেক ঘুরে বেড়ানো যায়।

কাপ্তাই লেক ঘিরেই বাংলাদেশ নৌবাহিনীর শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটি কাপ্তাই জেটিঘাঁট সংলগ্ন সেনাবাহিনী পরিচালিত দুই-তিন অসাধারণ পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে নিদিষ্ট ভ্রমণ ফি দিয়ে এসব পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণ করতে পারেন যে কেউ কাপ্তাই বাঁধ, কর্ণফুলী নদীর মাঁঝখানে দেশের বৃহত্তম বাঁধ সৃষ্ঠির ফলে কাপ্তাইয়ে পৃথক হয়ে গেছে কর্ণফুলী নদী তবে কাপ্তাইয়ে গেলে মনে হতে পারে কাপ্তাই থেকে শুরু হয়েছে কর্ণফুলী নদী।

কাপ্তাই বাঁধের এক অংশে নদী, অপর অংশের লেক। এই দুইয়ে মিলে যেন অপূর্ব সুন্দরে মিলন মেলা। কাপ্তাইয়ে বেড়াতেই গেলে কতৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিয়ে দেখা যাবে দেশের বৃহত্তম কাপ্তাই বাঁধ। কাপ্তাই বাঁধ দেখার জন‌্য কাপ্তাই ওয়াগ্গা ৪১ বিজিবি ব‌্যাটেলিয়ন অথবা কাপ্তাই পানি বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র কতৃপক্ষে অনুমতি নিতে হবে। একটু চেষ্টা করলেই অনুমতি পাওয়া যায়। কাপ্তাই বাঁধের পাশাপাশি পর্যটকদের জন‌্য দর্শনীয় হবে কাপ্তাই ২৪২ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দেশের এক মাত্র পানি বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র এবং দেশের প্রথম সৌরবিদ‌্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কাপ্তাই ৭.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন।

রাঙ্গুনীয়া শেখ রাশেল (ইকোপার্ক)কাপ্তাই যাওয়ার পথে কাপ্তাই উপজেলা প্রবেশ মুখেই রয়েছে এই পার্ক কৃত্রিম লেক এবং সবুজ প্রকৃতি ঘিরে এখানে তৈরি করা পাখির অভয়াণ‌্য। এখানে ঘুরে বেড়ানোর নানা সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে ক‌্যাবল কার।আপনারা চাইলে এই কারে ভ্রমণ করে দেখা যাবে সবুজ অরণ‌্য যা বয়সী মানুষের জন‌্য সমান উপভোগ‌্য।তাছাড়া আরো দেখা যাবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবন ধারা রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে বেড়াতে এলে দেখা মিলবে স্থানীয় ভিন্ন ভিন্ন আদিবাসী পাহাড়ি গোষ্ঠী এবং তাদের বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড।

কাপ্তাইয়ে রয়েছে কর্ণফুলী নদীর তীরে দেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার চিৎমরম ইউনিয়নে বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত।
কাপ্তাইয়ে চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারটি আদিবাসী ভাষায় চিংম্রং বৌদ্ধ বিহার হিসেবে বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ‌্যে পরিচিত বাংলাদেশ ছাড়িয়ে চীন, জাপান, থাইল‌্যান্ড, নেপাল,মিয়ানমার, ভারত, এমনকি আমেরিকান প্রভৃতি দেশ থেকে পূণ‌্যনার্থী এবং পর্যটকরা বৌদ্ধ ভিক্ষু দায়ক-দায়িকারা বৌদ্ধ বিহারে দর্শনে আসেন এই বৌদ্ধ বিহারটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।

কাপ্তাইয়ে আকর্ষণীয় আরো কয়কটি পর্যটন কেন্দ্র পাহাড় লেক ও কর্ণফুলী নদীর সৌন্দর্যকে ঘিরে উঠেছে ছেট-বড় আকর্ষণীয় একাধীক পর্যটন কেন্দ্র।এর মধ‌্যে উল্লেখযোগ‌্য হলো কাপ্তাই বিজিবি পরিচালিত জুম রেস্তোঁরা, এই নামে রেস্তোঁরা হলেও এটি মূলত একটি পরিপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। এছাড়া আছে কাপ্তাই নৌ-বাহিনী প্রশিক্ষণ ঘাঁটি শহীদ মোয়াজ্জমের পর্যটন কেন্দ্র প‌্যারাডাইস। কাপ্তাই সেনা জোন নিয়ন্ত্রিত কাপ্তাই লেকে উপর আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র এটি। কাপ্তাই রয়েছে চট্রগ্রামের বৃহত্তম মনমুদ্ধকর চা- বাগান কাপ্তাই উপজেলা সদরের কাছে কর্ণফুলী নদীর তীরে ওয়াগ্গা ইউনিয়নে এই চা-বাগানটি অবস্থান।

কী ভাবে যাবেন, ঢাকা বা দেশের যে কোনো জেলা থেকে সড়ক পথে বাস, রেল বা বিমানে করে চট্টগ্রাম আসতে হবে। এরপর চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কাপ্তাই যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপ্তাইয়ে দূরত্ব মাত্র ৫৮ কিলোমিটা। এছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি কাপ্তাই পর্যন্ত বাস সার্ভিস রয়েছে।

ঢাকা কলাবাগান ,মতিঝিল, ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন সকাল বিকেল মর্ডান লাইন, এস আলম, ডলফিন, ওশ‌্যামলি পরিবহনের বাস ঢাকা –কাপ্তাই সার্ভিস দিয়ে থাকে । এবং কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনের চট্টগ্রাম হয়ে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বাস সার্ভিসে কাপ্তাই যাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম সড়কের অবস্থা খুবই চমৎকার। চট্টগ্রাম থেকে হালদা নদী পার হয়ে রাউজান, রাঙ্গুনীয়া হয়ে চদ্রঘোনা। চদ্রঘোনা বাস স্টপেজের স্থানীয় নাম লিচু বাগান আর একটু সামনে গেলে চদ্রঘোনা কাগজ কল ও রেয়ন শিল্প কারখানা উঁচু নীঁচু পাহাড়ি পথ হয়ে কাপ্তাই। এডিট, সাইফুল amarbangla.tv  শেয়ার করুন।