এমপি দুর্জয়
আমার বাংলা টিভি ডেস্ক : এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও তার স্বজনদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা করে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে কতিপয় যুবলীগ কর্মী ও মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। আর নেপথ্যে পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্ব পালন করায় প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা জমা হচ্ছে দুর্জয়ের পকেটে।
জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক থাকায় নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের কাছে মানিকগঞ্জবাসীর আলাদা চাওয়া পাওয়া ছিল। আশা ছিল খেলাধুলা আর সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানিকগঞ্জের কিশোর-তরুণরা এগিয়ে যাবে, দেশবাসীর দৃষ্টি কাড়বে। কিন্তু সেই দুর্জয়ই এখন তরুণ সমাজকে বিপথগামী করার প্রধান কারিগর। তার সময়ই মানিকগঞ্জে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক, গঠিত হয়ে অসংখ্য কিশোর গ্যাং। amarbangla.tv
এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা গেছে, আরিচা-কাজিরহাট ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট হয়ে গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন, ফেন্সিডিল আসে মানিকগঞ্জে। আর এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি নেতৃত্বে আছেন এমপি দুর্জয়ের ভাই জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মাহাবুবুর রহমান জনি ও আরেক ছোট ভাই অনি।
শীর্ষ পর্যায়ের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মানিকগঞ্জ জেলার ১৪২ জনের বিরুদ্ধে মাদকের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনসহ মন্ত্রণালয়গুলোর জরিপ রিপোর্ট ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দাখিলও করা হয়েছে। এই তালিকায় জেলার ১৪ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম এসেছে। আর তাদের অনেকেই এমপি দুর্জয়ের ডান হাত বাম হাতের মতো। amarbangla.tv
তালিকার ২ নম্বরে আছেন দুর্জয়ের বাম হাত হিসেবে পরিচিত মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজা এবং ৩ নম্বরে আছেন দুর্জয়ের ডান হাত খ্যাত জেলা পরিষদ সদস্য, যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আবুল বাশার।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনে এই চিহ্নিত অপরাধীদের সঙ্গে দুর্জয়ের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
জানা যায়, জেলা শহরের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, পশ্চিম দাশড়া, বেউথা, মানরা, জয়রা, দক্ষিণ সেওতা, পৌলি, গড়পাড়া, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ এলাকা, দৌলতপুর উপজেলার কেলিয়া বাজার, শিবালয় উপজেলার আরিচা বড় টার্মিনাল এলাকা, ঘিওর উপজেলার জাবড়া মনিপাড়া এলাকা, হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর, সিঙ্গাইর ডিগ্রি কলেজ ও বায়রা এলাকায় মাদক বিক্রয় হয় প্রতিনিয়ত। আর ওইসব নির্ধারিত স্থানে মাদক কারবারীর নেতৃতত্ব দেন রিজার্ভ ট্যাঙ্ক এলাকার অঞ্জন (৪০), পশ্চিম দাশড়ার রাসেল (২২), একই এলাকার সুজন, শিবালয় উপজেলার তৈমুর সালাউদ্দিন মিটুল (৪০), মনির (৩০), মহসিন (৩৮), রনি ও মামুন নামের দুই ভাই, সজল ও জাহিদ নামের দুই ভাই, সিঙ্গাইর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক, সিংঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামিলীগ যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শহিদ (৫০)। মাদক বিক্রির লাভের একটি বড় অংশ চলে যায় জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মাহাবুবুর রহমান জনির পকেটে আর এ অবৈধ টাকার একটি অংশ যায় দুর্জয়ের টেবিলে। amarbangla.tv
শিবালয় উপজেলার রহমান খাঁ নামের এক দিনমজুর বলেন, আমাদের এলাকায় যত গাঁজা ইয়াবার বড় বড় ব্যবসায়ী সবাই এমপি সাহেবের পছন্দের নেতা। তারা আমাগো এলাকাটারে শেষ কইরা ফালাইলো। কিছু কইবার নাই, আমরা গরিব মানুষ, আল্লায় চোখ দিছে দেখবার তাই দেখি। কোন একদিন উনাগো বিচার হইবো, সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিবালয় উপজেলার এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমাগো সংসদীয় আসনে একজন এমপি থাকার কথা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এমপি হিসেবে আছেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়, তার চাচা টিপু ভাই, জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মাহাবুবুর রহমান জনি এবং দুর্জয়ের মা নীনা রহমান। তাদের অত্যাচারে আমরা আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা সমর্থকরা অতিষ্ঠ। বিএনপি জামায়াত থেকে আসা লোকজনদের স্বার্থে তারা যত ধরনের নিকৃষ্ট কাজ আছে করছে। দুর্জয়ের ভাই জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মাহাবুবুর রহমান জনি আমাদের অঞ্চলটাকে মাদক নগরীতে পরিণত করেছে। যুবসমাজ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমরা কিছু বলতে পারি না। তাদের দাপটে আমরা আজ কোণঠাসা। আমরা যারা আওয়ামী লীগের দুর্দিনে মাঠে ঘাটে রাজনীতি করেছি, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে সবার একটাই দাবি, এ অত্যাচার থেকে আমরা মুক্তি চাই।
নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের ভাই জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মাহাবুবুর রহমান জনির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একাধিক বার তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। amarbangla.tv
এমপি দুর্জয় এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, অবৈধ কোনো কাজকর্মের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। শেয়ার করুন।