ট্রাভেল এজেন্সিগুলো দুষ্ট, তারাই মানবপাচারকারী, এদের কখনোই শাস্তি দেওয়া হয়না

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো দুষ্ট, তারাই মানবপাচারকারী, এদের কখনোই শাস্তি দেওয়া হয় না পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

আমার বাংলা টিভি ডেস্কঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আগে বাংলাদেশি পাচারকারীদের ধরে শাস্তি দিতে হবে।

পাচারকারীদের প্রলোভনে পড়ে যারা অবৈধভাবে বিদেশ যায় এ জন্য তাদের পরিবারও দায়ী।

অবৈধভাবে যেতে টাকা পয়সা দিয়ে মা-বাবা, ভাই-বোন এরাই সহযোগিতা করে। অথচ, সে সময় তারা এটা প্রশাসন ও সরকারকে জানায় না।

এরাই অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে যখন বিপদে পড়ে তখন জনগনের টাকায় তাদেরকে সাহায্য করতে হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ইমিগ্রেশনেও দুষ্ট লোক রয়েছে। ওরা ঠিকভাবে চেক করেনা। নয়তো ১২ বছরের মেয়ে কিভাবে ডমেস্টিক কাছ যায়? আবার কেউ কেউ ভূয়া কাগজ পত্র তৈরি করেও ইমিগ্রেশনের চোখ এড়িয়ে যায়।

এর আগেও অবৈধভাবে বিদেশ যাত্রায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে বাংলাদেশিদের প্রাণহানি ঘটেছিল।

সে সময় সিলেটের ১২ জন মানব পাচারকারীকে ধরা হয়েছিল। কিন্তু, এরা ঠিকই বেরিয়ে এসে আবারও পাচারকাজে যুক্ত হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, লিবিয়ায় নিহত ২৬ বাংলাদেশিকে কারা পাঠালো, কারা নিলো আর কারা মুক্তিপণ চাইলো সব কিছুই উদঘাটন করতেছি।

বৃহস্পতিবার হত্যার শিকার ২৬ বাংলাদেশি

এই চক্রের মাধ্যমেই লিবিয়ায় গিয়ে দেশটির মিজদা শহরে বৃহস্পতিবার মানব পাচারকারীদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১২ জন আহত হন। জিম্মিকারী দালাল চক্রকে বাংলাদেশ থেকে দফায়-দফায় লাখ লাখ টাকা পাঠিয়েও স্বজনদের বাঁচাতে পারেনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে জিম্মিকারী দালাল চক্রের হাতে বন্দি হন মাদারীপুরের ২৬ বছরের যুবক শাহিন মাতুব্বর। এরপর কয়েক দফায় দেশে ফোন করে জিম্মিকারীরা মুক্তিপণ চেয়ে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। সুদে ঋণ করে টাকা পাঠিয়েও ছেলেকে বাঁচাতে না পেরে এখন দিশেহারা তার পরিবার।

বৃহস্পতিবার হত্যার শিকার ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে শাহিন মাতুব্বরও একজন। শাহিনের ভ্যানচালক বাবা কালাম মাতুব্বরের অভিযোগ, মাদারীপুরের রাজৈরের পাঠানকান্দি এলাকার লিবিয়া প্রবাসী আমির হোসেন এবং দেশে তার ভাই নূর হোসেনের মাধ্যমে সাত মাস আগে ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠান। এরপর থেকে তাদের কাছে মোবাইলে শাহিনকে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে লিবিয়া থেকে ফোন করে একাধিক ব্যক্তি। বাধ্য হয়ে সুদে ঋণ করে দুই দফায় ১০ লাখ টাকা দালালদের নির্দেশনা মতো দেন। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা ও ১১ জনকে আহত করার ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে ইতিমধ্যে ত্রিপোলির সরকারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মানব পাচারকারী চক্র উন্নত জীবন ও বিপুল আয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে হতভাগ্য মানুষদের বিদেশে নিয়ে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে এই দালাল চক্রের সঙ্গে প্রশাসনের লোকজনও জড়িত থাকেন।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মাদ শহীদুল হক গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৫ সালে এ ধরনের ঘটনা বেড়ে গেলে লোক পাঠানো বন্ধ করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেওয়া নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা করা হয়। তখন স্থানীয় রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকেরা যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন, বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব তাদের। তবে বাংলাদেশ সরকার এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়। ফলে হাইকোর্ট সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে সিদ্ধান্ত দেয়।

লিবিয়াকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে ইউরোপে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা জানান, স্থানীয় দালাল চক্র প্রথমে টোপ ফেলে প্রলোভন দেখিয়ে বলে, আগে টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, ইতালি পৌঁছে তার পরে টাকাপয়সার লেনদেন হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ত্যাগের পরে তাদের তিন থেকে চারবার বিক্রি করা হয়। তাদের লিবিয়া বা অন্য কোনো সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে জিম্মি করা হয়। পরে তাদের পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়। শেয়ার করুন।