আইন অমান্য করে চট্টগ্রামে ভরাট হচ্ছে আরো একটি পুকুর, দেখার কেউ নেই !

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সমবায় সিঙ্গাপুর মার্কেটের পেছনে আরো একটি পুকুর ভরাট করে নিচ্ছে মালিকদের একটি পক্ষ।

আমার বাংলা টিভি ডেস্কঃ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অমান্য করে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সমবায় সিঙ্গাপুর মার্কেটের পেছনে আরো একটি পুকুর ভরাট করে নিচ্ছে মালিকদের একটি পক্ষ। ‘সরকার বাড়ি পুকুর’ নামের ওই পুকুর ভরাট করা হলে স্থানীয় নি¤œ আয়ের ৫ শতাধিক পরিবারের ধোয়া মোছাসহ নিত্য ব্যবহার্য পানির সংকট দেখা দিবে। এছাড়াও অগ্নিকান্ড কিংবা যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে পানির সংকট দেখা দিবে। ফলে স্থানীয় নি¤œ আয়ের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) এর ৬(ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যাক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট করা যাবেনা। প্রাকৃতিক জলাধার আইন-২০০০ অনুসারে- পুকুর, জলাশয়, নদী, খালা ভরাট করা বেআইনি। একই আইনে পুকুরের মতো কোনো প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণী পরিবর্তন করা দন্ডনীয় অপরাধ বলা হয়েছে। কেউ এই আইন অমান্য করলে ৫ বছরের কারাদন্ড, অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এতসব আইনের তোয়াক্কা না করেই গত তিন দিন ধরে সরকারি বাড়ি পুকুর ভরাট করছে মালিকদের একটি পক্ষ।

গত শুক্রবার বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসকে জানানো হলে তিনি জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। শীঘ্রই ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করা হবে।
এদিকে একই বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক মনির হোসেন সোমবার দুপুরে জানান, তারা (পরিবেশ অধিদফতর) গত শনিবার পুকুরটি পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু যে সময়ে পরিদর্শনে গেছেন সে সময় জোয়ার থাকায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। আজ শোক দিবস হওয়ায় কোনো অভিযানে যাচ্ছেন না। মঙ্গলবার সকালে তারা পুনরায় অভিযানে যাবেন বলে জানান।

আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, পরিবেশ অধিদফতরের ব্যবস্থা নিতে দেরি হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুকুরটি দ্রুত ভরাট করা হচ্ছে। পুকুরটির একাংশে বাঁশ ও বেড়া দিয়ে ঘেরা দেয়া হয়েছে। কিছু শ্রমিক পাশ্ববর্তী একটি জায়গা থেকে বালি এনে পুকুরটি ভরাটের কাজ করছেন। এ সময় পুকুরটির আশপাশে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবারের ঘর দেখা গেছে। যাদের বেশিরভাগই নি¤œ আয়ের লোক। তারা পুকুরটির আশপাশে টিনশেডের ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সেখানে পানির চরম সংকট রয়েছে। লাইনে পানি না পেলে বেশিরভাগ সময় বাসিন্দারা পুকুরটি থেকে ধোয়া মোছাসহ নিত্য ব্যবহারে পানি সংগ্রহ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই পুকুরটির মালিক দুটি পক্ষ। এদের একটি পক্ষ মোহাম্মদ জিসান ও মোহাম্মদ জনি নামের দুই ভাই এবং পারভেজ নামের তাদের এক মামাতো ভাই। তারা পৈত্রিক ও মায়ের কাছ থেকে ওই অংশটি পেয়েছেন। অপর পক্ষের মালিক রাশেদা আক্তার, সাইফুল ইসলাম ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ক্রয়সূত্রে তারা ওই অংশের মালিক। মূলত জিসান, জনি ও পারভেজ মিলেই পুকুরটি ভরাট করে পুকুরের অধিকাংশ দখলে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। দখলদাররা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ নিজেদের নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে চাননি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোহাম্মদ জিসান বলেন, ‘এটা আমাদের নিজস্ব জায়গা। এখানে ভাড়া ঘর আছে। বাসিন্দাদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুকুরের কিছু অংশ ভরাট করা হচ্ছে।’ তিনি ভরাটের বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতরকে জানিয়ে করছেন বলেও দাবি করেন।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে অপর পক্ষের সাইফুল ইসলাম জানান, তারা পুকুর ভরাটের সাথে জড়িত নন। বরং তারা তিন দিন আগে পরিবেশ অধিদফতরকে জানিয়েছেন। তারা এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্যমতে- চান্দগাঁও, বায়োজিদ বোস্তামি, হালিশহর, বাকলিয়াসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গত দুই যুগে অন্তত এক ডজনের বেশি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। ব্যাক্তিগত ঘরবাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ভূমিদস্যুরা এসব পুকুর ভরাট করেছেন।