পাঠকের জন্য পাঠাগার বাস্তবায়নে পউস

 

আমার বাংলা টিভি ডেস্ক/ মনিরুজ্জামান মুন্না, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ ” সবার আগে মানুষ হব, আলোকিত পত্নীতলা গড়বো ” এই স্লোগান কে সামনে রেখে ‘পত্নীতলা উপজেলা সমিতি ‘ পউস ২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায়। পরে পত্নীতলার শিক্ষা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে পউসের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়।

সূচনা লগ্ন থেকেই এই অরাজনৈতিক, অলাভজনক, সেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা ত্রান বিতরণ, ক্যারিয়ার গাইড লাইন, পউস ব্লাড এইড, নওগাঁ, ২২ জন অস্বচ্ছল পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কে মাসিক বৃত্তি প্রদান, চিকিৎসা সেবা, বৃক্ষ রোপন, এককালীন আর্থিক সহযোগিতা, নজিপুরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যোক্তিক দাবিতে মানববন্ধন ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য “মানবতার আলমারি ” স্থাপন করেছেন।

এবার সংগঠনটি, জ্ঞান চর্চা, সমাজসেবা মূলক কার্যক্রম ও শিক্ষার আলোয় আলোকিত পত্নীতলা গড়ার লক্ষ্যে, নজিপুর ফায়ার সার্ভিসের পশ্চিম পার্শে অর্নি প্লাজায় ” পউস পাঠাগার” স্থাপন করেছেন। গত ১৩ অক্টোবর প্রায় শতাধিক বই দিয়ে যাত্রা শুরু করে। উক্ত পাঠাগার টি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

এই পাঠাগারটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন, ৯ জন উপদেষ্টা ও ১১ জন পরিচালনা পর্ষদ। উপদেষ্টায় রয়েছেন, মোঃ ময়েজউদ্দিন – প্রধান উপদেষ্টা, পউস পাঠাগার, প্রফেসর মোঃ আব্দুল করিম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ( অবঃ) ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রধান শিক্ষক লুতফর রহমান শাহ ফকির, প্রফেসর সাইফুল ইসলাম, প্রফেসর আবু হেনা মোঃ নুরুল ইসলাম, প্রফেসর ডাঃ দীপক কুমার মহন্ত, বাদল চৌধুরী,অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজি প্রভাষক মোঃ আছির উদ্দিন।

পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন, সভাপতি সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ মোজাহার আলি, সহ সভাপতি সাবেক কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ আমজাদ হোসেন, সহ সভাপতি সহকারি অধ্যাপক মোঃ হাবিবুর রহমান, সহ সভাপতি সহকারি অধ্যাপক বুলবুল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তসলিম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মোঃ আখতার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মোঃ নজরুল ইসলাম শাহ , অর্থ সম্পাদক ডাঃ আবু রায়হান রাজিন সহ আরো ৩ জন।

সংগঠনটির সদস্য, হাবিব সাত্তী আমার বাংলা টিভিকে জানান, এটা শুধু পাঠাগার হবেনা সেইসাথে শিক্ষা ও সমাজসেবার কেন্দ্রবিন্দু, ইংলিশ ল্যংগুয়েজ ক্লাব প্রতিষ্ঠা৷ বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম, বই পড়া প্রতিযোগিতা, পড়া উৎসব আয়োজন, শিশুদের জন্য আলাদা কর্নার ( ব্লক কর্নার , কল্পনা কর্নার, বই কর্নার, গল্প বলার আসর, ) নিজস্ব স্থায়ী ভবনে, জবের ও উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতির জন্য আলাদা গ্রুপ স্টাডি, বিনামূল্যে বিদেশে স্কলারশিপ, দেশ ও বিদেশে চাকরির আবেদন ও জব সার্চের সুযোগ ( ফান্ড থাকা সাপেক্ষে), প্রতি বছর শিক্ষামেলা, গণিত ও ইংরেজি অলিম্পিয়াড আয়োজন,স্কুল কলেজের পাঠক ফোরাম গঠন, সর্বোচ্চ বই পড়ুয়াদের পুরুস্কৃত করা, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজন ও বই পড়ায় আগ্রহ সৃষ্টি
নিয়মিত দৈনিক, মাসিক বাংলা ইংরেজি পত্রিকা। তিনি মনে করেন এই পাঠাগারের মাধ্যমে পত্নীতলা উপজেলার শিক্ষা বিস্তার ও জ্ঞান চর্চার আরো প্রসার ঘটবে।

পাঠাগার সম্পর্কে জানতে চাইলে সদ্য ঘোষিত ৩৮তম বিসিএস এ শিক্ষা ক্যাডার এ সুপারিশ প্রাপ্ত্য মিজানুর রহমান আমার বাংলা টিভিকে বলেন, পউস শব্দটা লেখা বা বলার মাঝে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন কিছু দিন পউস নিয়ে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তখন পউস শুধুমাত্র একটি সমিতি হিসেবে কাজ করত । কিন্তু বর্তমান সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পউসের পরিসর আজ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এতে কাজ করছে এক ঝাঁক তরুণ মেধাবীরা । বৃদ্ধিপ্রাপ্ত পরিসর যেমন পউস ব্লাড ব্যাংক, পউস মানবতার আলমারি এবং নতুন সংযোজন পউস পাঠাগার।

উদাহরণ হিসেবে তিনি আরো বলেন, মিশরীয় সভ্যতার আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি (৩০৫ খ্রিস্ট পূর্ব)। মুসলিম সভ্যতার স্বর্ণ যুগ হিসেবে খ্যাত আব্বাসীয় আমলে বায়তুল হিকমা। আর বর্তমান আধুনিক ইউরোপ বিনির্মাণে মুসলিমদের প্রতিষ্ঠিত কর্ডোভা লাইব্রেরির কথা।

মিজান বলেন, সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ে অনেক রাষ্ট্রীয়, প্রাতিষ্ঠানিক এমনকি কিছু- কিছু আঞ্চলিক পাঠাগার গড়ে তোলা হয়। সেইরূপ পত্নীতলার মানুষ কে আলোকিত করার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে পউস পাঠাগার। যার সুদূর প্রসারী ফলাফল পাবে অত্র অঞ্চলের মানুষ। আর দেশ ও জাতি গড়ার ক্ষেত্রে দক্ষ ও সুশিক্ষিত জনবল তৈরির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।

প্রমথ চৌধুরী উক্তি টেনে সে বলেন, সাহিত্য চর্চার জন্য চাই লাইব্রেরি, এ দেশে লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চেয়ে কিছু কম নয় এবং স্কুল কলেজের চেয়ে বেশি। তাই মানুষ কে জ্ঞান তাপস হওয়ার জন্য এইরূপ মহৎ ভূমিকা যাহারা গ্রহণ করেছে তাদের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এই পউস পাঠাগারের মাধ্যমে আলোকিত পত্নীতলা গড়ে উঠুক সে প্রত্যাশায় কামনা করি।