মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর ও লেখক হৃদয় হাসান বাবু।
আমার বাংলা টিভি ডেস্কঃ গত কয়েকদিন আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আগামীর রাষ্ট্রনায়ক জনাব তারেক রহমান (তারেক জিয়া) চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ৫৫ জন নেতার সাথে স্কাইপে আলাপ করেছেন। মনোযোগ দিয়ে সবার কথা শুনেছেন। এর পরেই বাতাসে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, গেলো গেলো- মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর এর পদ বুঝি গেলো! এর মধ্যেই সুযোগ সন্ধানী খেলোয়াড়রা সুযোগে গোল দিতে উঠে পড়ে লাগলো। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা হলো- পদ-পদবী কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়।
সময়ের প্রয়োজনে, দলের প্রয়োজনে পরিবর্তন, পরিবর্ধন সময়েরই দাবি। কিন্তু তারপরেও কিছু কথা থেকে যায়। এই মধ্যরাতের ভোটের অবৈধ সরকারের একের পর এক গায়েবী মামলার কারণে জেল-জুলুম-হামলা-মামলায় চরমভাবে লাঞ্চিত ও জর্জরিত হয়েও তৃণমূলের নির্ভরযোগ্য নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন ও দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ আবুল হাসেম বক্কর যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে চাচ্ছেন এটাই তো দলের নেতা-কর্মীদের প্রাণের চাওয়া। তবে রাজনৈতিক সচেতন মহলসহ অনেকের মতোই আমিও এটা এখনো বিশ্বাস করি, গত মেয়াদেই ডা. শাহাদাতকে সভাপতি না বানিয়ে ওনাকে আরো এক মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকে রেখে অভিজ্ঞতালব্ধ ও বর্ষিয়ান কোনো একজন নেতাকে সভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করলে ডাক্তার মাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতার পাল্লাটা আরো সমৃদ্ধ হতে পারতো।
নেতৃত্বের অভিজ্ঞতার ভাÐারকে সমৃদ্ধ করে এই সময়ে এসে ডা. শাহাদাত অটো প্রমোশনে সভাপতির দায়িত্ব নিতে পারতেন। এটা দলের জন্যও ভালো হতো আবার ডা. শাহাদাতের জন্যও নেতৃত্বের নানাদিক অভিজ্ঞতা অর্জনের দারুণ একটা ক্ষেত্র তৈরি হতো। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে তখন তা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
সময়ের এক ফোড় অসময়ের শত ফোড়, এই প্রবাদটা আমাদের ভাবনায় রাখলেও কর্মে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হই বলেই কিছু কিছু সমস্যা থেকে যায়। যা গুছিয়ে আনতে প্রচুর কষ্ট স্বীকার করতে হয় এবং সাংগঠনিক গতিশীলতাও ব্যহত হয়। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের সাথে মেধা, অভিজ্ঞতা, ধারে, ভারে ও চৌকস পরিচালনায় পাল্লা দিতে না পারলে দাবার চালে ভুল চালের খেসারত দিতে হয়। যাই হোক, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ভালোবাসার প্রেক্ষিতে দল অন্তপ্রাণ কর্মীরা সব সময় নেতৃত্বের উপর পূর্ণ আস্থাশীল ছিলো, আছে এবং থাকবে। এটাই আমাদের ট্রেডিশন।
কিছু কথা না বললেই নয়। স্বৈরাচারী, বিরোধী মতকে নির্মমমতায় দলনকারী সরকারের রক্ত চক্ষুকে পরোয়া না করে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইউনিট চট্টগ্রামের বিএনপি পরিবারের সদস্যদের মোটামুটি এক ছাতার তলে এনে শক্ত হাতে হাল ধরে এগিয়ে নিচ্ছেন ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাসেম বক্কর। যদিও তাদের এই পথচলা তেমনটা মসৃণ নয়।
রাজনৈতিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও দল পরিচালনায় তারা একশতে আশি না পেলেও অবশ্যই একশতে ষাট পাওয়ার দাবিদার। বর্তমান সময়ে এসে তাদের নেতৃত্ব অপরিহার্য বলেই মনে করি। তাই দল বিরোধী দলে থাকুক আর ক্ষমতায় থাকুক দল পরিচালনায় পরিপক্কতা, অভিজ্ঞতাকে আস্থায় এনে অন্তত আরো ৪ থেকে ৬ বছর বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেই দায়িত্ব পালনে এগিয়ে রাখা উচিৎ। তাদের মেয়াদকালীন সময়ে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারার ব্যর্থতার কথা বারবার উঠে আসছে। কিন্তু এটাও আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে যে, এ দায় শুধু তাদের দুজনের একার নয়।
বিএনপির নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন সংসদীয় আসনের এমপি প্রার্থীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হয়। তাই তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করাটাও কঠিন। সব মিলিয়ে বিভিন্ন দিকের চাওয়া পাওয়ার টানাপড়েনে পড়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর অবৈধ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামকে চাঙ্গা করে তুলতে কর্মী ও জনসাধারণকে মাঠে নামাতে কিছুটা ব্যর্থ হলেও এই ব্যর্থতার পেছনে সরকারের বহুমাত্রিক দমন নীতিকেও দায়ী করা যায়।
এখানে একটা গ্ররুত্বপূর্ণ দিকে আলোকপাত করতে চাই। তা হলো, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার খুব কাছে অবস্থান করার কারণে নেতাদের নিজের অবস্থানকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অপরিহার্য করে তুলে ধরার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষের ব্যক্তিগত বলয় সৃষ্টির কারণে উপদলীয় কোন্দলে জর্জরিত হয়ে ওঠে। জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে চট্টগ্রামও এই উপদলীয় কোন্দলের কালচার থেকে দূরে নয়। প্রতিটা সরকারের আমলেই চট্টগ্রাম থেকে যেহেতু বেশ কয়েকজন মন্ত্রী দায়িত্ব প্রাপ্ত হন, এখানে একজন মেয়র নির্বাচিত হন, মহানগর ও জেলায় মিলিয়ে ১৫ টি সংসদীয় আসন বিদ্যমান। আরো আছে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সিডিএ চেয়ারম্যানের মতো পদগুলিকেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের পদায়নের মাধ্যমে রাজনীতিকরণ।
তাইতো এই সব পদ বাগিয়ে নেয়ার জন্য রাজনীতিতে নিজের শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে গিয়ে নেতৃত্বের দৃষ্টিকটু প্রতিযোগিতা দেখতে পাই। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার খুব কাছে অবস্থান করার কারণে নেতাদের নিজের অবস্থানকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অপরিহার্য করে তুলে ধরার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষের ব্যক্তিগত বলয় সৃষ্টির কারণে অনেক প্রকৃত দলপ্রাণ নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয় ও দলও উপদলীয় কোন্দলে জর্জরিত হয়ে ওঠে।
জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে চট্টগ্রামও এই উপদলীয় কোন্দলের কালচার থেকে দূরে নয়। প্রতিটা সরকারের আমলেই চট্টগ্রাম থেকে যেহেতু বেশ কয়েকজন মন্ত্রী দায়িত্ব প্রাপ্ত হন, এখানে একজন মেয়র নির্বাচিত হন, মহানগর ও জেলায় মিলিয়ে ১৫ টি সংসদীয় আসন বিদ্যমান। আরো আছে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সিডিএ চেয়ারম্যানের মতো পদগুলিকেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের পদায়নের মাধ্যমে রাজনীতিকরণ। তাইতো এই সব পদ বাগিয়ে নেয়ার জন্য রাজনীতিতে নিজের শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে গিয়ে নেতৃত্বের দৃষ্টিকটু প্রতিযোগিতা দেখতে পাই।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এর রাজনীতিতে একটা ব্যাপার ওপেন সিক্রেট যা শুধু দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরাই নয় রাজনীতি সচেতন মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ সবাই জানে তা হলো, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের উপদলীয় কোন্দলের খবর। ভাইয়ের রাজনীতিকে তুলে ধরতে গিয়ে এই আত্মঘাতী উপদলীয় কোন্দলের কারণে দলের আদর্শের রাজনীতির পথচলা শুধু ব্যহতই হয় না, উপদলীয় কোন্দলের টানাপোড়েনের কারণে এক গ্রুপ অপর গ্রুপ কে হামলা, মামলা দিয়ে রাজনীতির এগিয়ে যাওয়ার পথচলাকে সমস্যায় জর্জরিত করে তুলে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় বিএনপি-আওয়ামী লীগের চরম কোন্দলের কারণে নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সংগঠিত হয়ে নিজেদের নেতা-কর্মীর জীবনহানী পর্যন্ত হয়েছে। যা অতীব দুঃখজনক। তাই ঘন ঘন নেতৃত্ব বদলালে দলের ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকারে আসে না। বরঞ্চ নতুন নতুন গ্রুপ সৃষ্টি হয় ও দিনদিন গ্রুপিংটা আরো বৃদ্ধি পায়।
অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি চৌকস নেতৃত্বের গুণাবলী পরিস্ফুট হওয়ার সময়ে এসেই যদি নেতৃত্ব কেড়ে নেয়া হয় তাহলে ভালো মানের নেতৃত্ব গড়ে উঠার পথে তা অন্তরায় হবে বলেই আমার বিশ্বাস। অপ্রিয় হলেও সত্যি, তা হলো একজন মহিউদ্দিন চৌধুরী কয়েক বছরে সৃষ্টি হননি। তিনি একটানা প্রায় তিন দশকের চেয়েও বেশি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন বলেই তিনি দল পরিচালনা ও জনসমৃক্ততায় অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের গুণাবলীকে অনন্য উচ্চতায় নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বিএনপিতেও এমন পোড় খাওয়া নেতৃত্ব সৃষ্টির পথকে সুগম করতে হবে। সর্বশেষ ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাসেম বক্করকে বলবো, বিএনপিসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের একই ছাতার তলে ঐক্যবদ্ধ করে এই জনবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে চুড়ান্ত পরিণতির দিকে ধাবিত করুন।
চট্টগ্রামে অবস্থিত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও অভিজ্ঞতায় সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে যথাযথ সম্মান প্রদান ও আস্থায় এনে দল গোছানো থেকে শুরু করে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে তাদের পরামর্শকে কাজে লাগান। আমার লোক, অমুকের লোক, তমুকের লোক এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসুন। সবারই একটাই পরিচয় হোক, তারা মহান স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানেরর আদর্শের সৈনিক, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কর্মী, আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক জিয়ার বিশ্বস্ত হাতিয়ার।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও গল্পকার। শেয়ার করুন amarbangla.tv