অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্বাধীন দেশ ৭৫’এ ধ্বংসের অপচেষ্টা করা হয়েছে -তথ্যমন্ত্রী

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক দুঃস্থ ও মন্দিরের অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

 

আমার বাংলা টিভি ডেস্কঃ আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে সবার রক্তস্রোতের বিনিময়ে বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছিল ৭৫ এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুতকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে সেটা ধ্বংসের অপচেষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রকে উল্টো পথে হাঁটানোর চেষ্টা করা হয়। দীর্ঘ ২১ বছর রাষ্ট্র উল্টো পথে হেঁটেছে। এরপর ৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুয কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর যে চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র রচিত হয়েছে সেই চেতনা গুলোকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করেছে।

শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক দুঃস্থ ও মন্দিরের অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ জেড এম শরীফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মফিজুর রহমান, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বাবুল চন্দ্র শর্মা, উত্তম কুমার শর্মা, চট্টগ্রাম জেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, সাধারন সম্পাদক অসীম কুমার দেব প্রমূখ।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মুসলিম সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে এই দেশের অভ্যুদয় হয়েছে। দেশ বিভাগ হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে। আমরা দেশ বিভাগের সময় পাকিস্তান রাষ্ট্র পেয়েছিলাম সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র। যেখানে ধর্মীয় পরিচয়টাকে মুখ্য হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু আমরা বাঙ্গালীদের আবহমানকাল ধরে লালিত সংস্কৃতি হচ্ছে আমাদের কাছে ধর্মীয় পরিচয় মুখ্য নয়। আমাদের কাছে বাঙালি পরিচয় হচ্ছে মুখ্য।

তিনি বলেন, যখন আমরা দেখতে পেলাম ধর্মীয় পরিচয় মুখ্য করতে গিয়ে আমাদের বাঙালি পরিচরয়র ওপর আঘাত আসছে, বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতির উপর আঘাত আসছে , বাংলা ভাষার উপর আঘাত আসছে। তখন আমরা সেই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতার যুদ্ধের মধ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্মিলিত রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই রাষ্ট্রের ধর্ম যার যার, উৎসব কিন্তু সবার, এই শ্লোগানে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুট কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এই নীতিতে বিশ্বাস করেন, সেই কারণে এই কথা তিনি সব সময় বলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে যখন পূজা উৎসব হয়, তখন সেটা শুধু হিন্দু ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা, সেই উৎসবে মুসলমান- খ্রিস্টান-বৌদ্ধ সবার মাঝে সেই উৎসবের আনন্দ সঞ্চারিত হয়। আমাদের দেশে যখন ঈদ উৎসব হয় সেই আনন্দ শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা। একইভাবে যখন প্রবারণা পূর্ণিমা হয় তখন ফানুস উড়ানোর উৎসব শুধু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনা। এটিই হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৌন্দর্য। এটাই হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু এখানে মাঝেমধ্যে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। যেটি আমাদের সরকার কঠোর হস্তে দমন করতে বদ্ধপরিকর।

তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে শত্রুর সম্পত্তি আইন করে একটি রাষ্ট্রের ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে যখন শত্রুক আখ্যায়িত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুি কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই আইনের পরিবর্তন হয়েছে। এই আইনের বেড়াজালে যেভাবে একটি সম্প্রদায়কে হয়রানি করার চেষ্টা করা হয়েছে, তাদের সহায় সম্পত্তি অনেক সময় বেহাত হয়েছে, বেহাত করার অপচেষ্টা করা হতো। সেটি থেকে রক্ষা এবং যেগুলো বেহাত হয়ে গেছে সে গুলোকে ফেরত আনার লক্ষে কিন্তু আইন প্রণয়ন করা হয়। আইন সংশোধন করা হয়, এবং প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হয়। অনেকেই ইতিমধ্যে এর সুফল পেয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সব সম্প্রদায় যেভাবে একযোগে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে সবাই মিলে একযোগে আমাদের দেশকে করতে হবে সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। এখানেই হচ্ছে পাকিস্তানের সাথে আমাদের পার্থক্য। পাকিস্তানের প্রায় ৯৮ শতাংশ মুসলমান, আবার সেখানে শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা হয়। শিয়াদের মসজিদে বোমা হয়, সুন্নিদের মসজিদে বোমা হয়। যেখানে রাষ্ট্র আগায় না। রাষ্ট্র আগাতে পারেনি, না হলে ৫০ বছরে পাকিস্তান রাষ্ট্র একাত্তরের সময় আমাদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ছিল, মাথাপিছু উপার্জন আমাদের চেয়ে দ্বিগুণ ছিল তখন। এখন সবক্ষেত্রে পাকিস্তান পিছিয়ে।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও জনগণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখে। এখানেই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুপর নেতৃত্বে বাংলাদেশ রাষ্ট্র রচনা সার্থকতা। আজকে বাংলাদেশ সমস্ত অর্থনৈতিক মানব উন্নয়ন সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে। মানব উন্নয়ন ও সামাজিক সূচকে অনেক ক্ষেত্রে ভারতকেও পেছনে ফেলেছি আমরা। এসব সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করছি, এটিকে অব্যাহত রাখতে হবে।

সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য নয় শুধু পৃথিবীর সকল হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য তীর্থস্থান উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেখানে কিন্তু সবাই উঠতে পারেনা, সে জন্য একটা ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন। আমি অনেকের সাথে আলাপ করেছি, আমার মনে হয় হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট একটি উদ্যোগ নিতে পারে, কিভাবে কি করা যায়। চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকব।