আল্লাহর প্রিয়জনদের কোন ভয় নেই

 রওজা শরীফের ফাইল ছবি

 

আমার বাংলা টিভি ডেস্কঃ “নিশ্চয় আল্লাহর প্রিয়জনদের কোন ভয় নেই, না তারা চিন্তিত হবে।যারা ঈমান আনয়ন করেছে এবং যারা ভয় করে (আল্লাহকে), তাদের জন্য রয়েছে ইহকাল ও পরকালের সুসংবাদ, আল্লাহর কথার কোনো ব্যাঘাত ঘটে না, এটা মহাসাফল্য” (সূরা ইউনুসঃ(৬২-৬৪)

প্রকাশ থাকে যে,এখানে আল্লাহর ওলি বা বন্ধুদের পরিচয় স্পষ্ট আয়াতে ঘোষনা করেছেন।যারা ঈমানদার হবে, আল্লাহকে ভয় করবে তারাই হচ্ছেন আল্লাহর ওলি বা বন্ধু। তবে প্রথম শর্ত হলো যারা ঈমানদার বা নির্ভেজাল ভাবে আল্লাহতে বিশ্বাসী হবে তারা ওলি হতে পারবেন।যদি আল্লাহকে যথাযত ভয় করেন।

তাদের ভয় ও চিন্তা নাই-এ বাক্যের তাফসিরে আল্লামা ইমামুদ্দিন ইবনে কাসির(রাঃ) বলেন, “আখেরাতে তাদের কোনা ভয় থাকবে না এবং দুনিয়াতে কোনো সম্পদ না পাওয়ার বেদনায় তারা ব্যাথাতুর হবে না।” অপরাপর মুফাসসিরে কেরাম বলেনঃদুনিয়া ও আখেরাতে কোথাও তাদের ভয় ও চিন্তা নেই। কারণ তারা আল্লাহর উদ্দেশ্য কাউকে ভালবাসেন,আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কারো সঙ্গে দুশমনী রাখেন।বোখারী শরীফের এক হাদীসে আছে,হযরত আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেন,আল্লাহর রাসূল(সাঃ) বলেন,আল্লাহ বলেন,”যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সঙ্গে শত্রুতা করবে,আমি তার সঙ্গে অবশ্যই যুদ্ধ ঘোষণা করলাম”। “যে সব বস্তু দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু হল ফরজ সমূহ। আর বান্দা বরাবরই তার নফল বা অতিরিক্ত কাজের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করে থাকে, শেষ পর্যন্ত আমি তাকে এতটাই ভালবাসি যে, আমি তার কান হয়ে যায়,যা দ্বারা সে শুনে, আমি তার চোখ হয়ে যায়, যা দ্বারা সে দেখে,আমি তার হাত হয়ে যায়,যা দ্বারা সে ধরে,আমি তার পা হয়ে যায়, যা দ্বারা সে চলে।আর যদি সে আমার কাছে কোনো আবদার করে আমি অবশ্যই তা রক্ষা করি। যদি সে আশ্রয় প্রার্থনা করে আমি অবশ্যই আশ্রয় প্রদান করি”।(বোখারী ২য় খন্ড ৯৬৩ পৃষ্টা)।

আল্লাহ তার হাত-পা হয়ে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে,হাক্বিক্বি অঙ্গ হয়ে গেল। বরং এই কথা দ্বারা মুমিন মুত্তাকি ব্যক্তিটি আল্লাহর মোহাব্বতের অতিশয্যে এতটাই উন্নীত হয়ে যান যে,তার হাত-পা,চোখ,কান তথা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা কৃত কার্যাদিকে আল্লাহর নির্দেশিত কর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াই উদ্দেশ্য। সুবহানাল্লাহ।

আল্লাহর এমনই একজন প্রিয় বান্দা ছিলেন বিশ্বঅলি শাহানশাহ হযরত মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ)।
বিশ্বঅলি শাহানশাহ হযরত মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ১৯২৮ ইং ২৫ ডিসেম্বর,১০ পৌষ ১৩৩৫ বাংলা সুবহে সাদিক এর সময় এই ধরাধামে তশরিফ আনেন।
তিনি হচ্ছেন গাউসুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ)’র প্রথম প্রপৌত্র, গাউসুল আজম বিল বেরাসত হযরত মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ গোলামুর রহমান (কঃ) প্রকাশ বাবাভাণ্ডারী কেবলা কাবার দৌহিত্র ও অছি-এ গাউসুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী(কঃ)’র প্রথম পুত্র। এই তিন মহান অলি আল্লাহর পবিত্র বংশ ও আধ্যাত্মিক জ্যৌতিতে তিনি “মহান তিনে মহাশক্তি”। বি.এ পরীক্ষার তৃতীয় দিনে তিনি আল্লাহর রহস্য-জ্ঞান সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন।এবং কঠোর রিয়াযত-সাধনায়’বেলায়তে ওজমা'(বেলায়তের সর্বোচ্চ স্তর) অর্জন করে প্রখ্যাত নবী ও অলিদের মত তিনিও নিজ পরিচিতি প্রকাশ করে বলে” রহমাতুল্লিল আ’লামিন রাসূল(সাঃ)’র রহমতের সীমানা জুড়ে আমার বেলায়তি কর্ম ক্ষমতা”।

পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ ইরশাদ করেন, “এটা আল্লাহর মহান অনুগ্রহ যাকে চান দেন,তাদের দৃষ্টান্ত বড়”
(আল জুমুয়া:৪ আয়াত) । বিশ্ব অলি শাহানশাহ হযরত মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী(কঃ) তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় মানবতার তরে উৎসর্গ করেছেন।
সময়ে সময়ে তিনি তাঁর জবানে পাকে আধ্যাত্মিক রহস্যভরা অমীয় কালাম করেছেন,যার দ্বারা দুঃস্থের দরিদ্রতা বিমোচন হয়েছে,দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে কেউ মুক্তি পেয়েছে,মামলা মোকদ্দমা থেকে কেউ রেহায় পেয়েছে,বেরারত্ব জীবনের অবসান ঘটিয়ে কেউ চাকরির সন্ধান পেয়েছে,পারিবারিক অশান্তি থেকে পরিত্রান পেয়েছে,কেউ জীবিকার সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমানোর ইঙ্গিত পেয়েছে,আবার কেউ ঋণ মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছে।

শাহানশাহ বাবাজানের সহচার্যে থেকে,সোহবত পেয়ে অনেক অনেক পথ ভ্রষ্ট দিশেহারা মানুষ আল্লাহর দ্বীনের পথে ফিরে এসেছে।কেউ কেউ আবার ইনসানে কামেল এর স্তরে উপনীত হয়েছেন।অনেক সময় দেখা গেছে দরবারে পাকে হক পথের অর্জিত টাকা পয়সা ১ টাকাও সাদরে কবুল করেছেন,আবার অসৎ পথের অর্জিত লক্ষ লক্ষ টাকা-পয়সা নিমিষেই পুঁড়ে ফেলেছেন। এভাবে শাহানশাহ হক ভাণ্ডারী(কঃ) মানুষকে মুক্তির পথের সন্ধান দিয়েছেন। তাইত তিনি নিজ জবানে পাকে কালাম করেন,”হালাল খাও,নামাজ পড়,আল্লাহ আল্লাহ জিকির কর,সব সমস্যা মিটে যাবে”। তিনি ছিলেন সমকালের মুজাদ্দেদ(সংস্কারক) ও বিশ্বঅলি।

শাহানশাহ হযরত মাওলানা শাহসূফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (কঃ) ৫৯ বছর ৯ মাস ১৯ দিন বয়সে ১৩ অক্টোবর ১৯৮৮ ইং,২৬ আশ্বিন ১৩৯৫ বাংলা বুধবার দিবাগত রাত ১২ টা ১৭ মিনিটে ‘আল্লাহ ‘ ‘আল্লাহ’ জিকিরের শব্দে তিনি আল্লাহর সাথে চিরস্থায়ী মিলনে ধন্য হন।

লেখক এম. আনিস উদ্দিন সোহেল।