অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হবে সেঁজুতি দাশ
চট্টগ্রামঃ পৃথিবীর যত সুন্দর তার অর্ধেক করিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী। বিশ্বের অর্ধেক জনসংখা যেখানে নারী সেখানে নারীকে বাদ দিয়ে এই পৃথিবীর সামগ্রিক উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও কথাটি পুরোপুরি সত্য। তবে অপ্রিয় সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ সবসময়েই কম। তবে আশার কথা এই যে, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এবং অবদান দিন দিন বাড়ছে। আজ নারী ঘরের বাইরে যাচ্ছে। নানা প্রতিযোগিতামূলক কাজে অংশ নিচ্ছে পুরুষের পাশাপাশি সমান তালেই। নারী আজ শুধু চাকরিই নয়, উদ্যোগী হচ্ছে নানা স্বাধীন ব্যবসায়।
নারী উদ্যোক্তা সেঁজুতি দাশ আমার বাংলা ডট টিভিকে বলেন আমার শুরুটা স্কুল জীবন থেকে। স্কুলের ক্লাস পার্টিতে আমাদের প্রতিযোগিতা ছিল নিজের হাতে কিছু বানানো। আমি সেই প্রতিযোগিতায় নিজের হাতে বানানো একটা পাখি নিয়ে গিয়েছিলাম। কাপড় দিয়ে বানানো সেই পাখি দেখে ম্যাডাম অনেক খুশি হয় ।পরে বলেন আমাকে এরকম আরো কয়েকটা পাখি বানিয়ে দিতে পারবে আমি বললাম ম্যাডাম পারব ।
জীবনের প্রথম অর্ডার । তখন পারিশ্রমিক হিসেবে কি পেয়েছিলাম জানেন? ম্যডামের প্রিয় ছাত্রী আর দুটো চকলেট ।আমি খুব খুশি হয়েছিলাম সেদিন।
সেদিন সেই পাখি বানানো দেখে বাবা বলেছিল খুব সুন্দর হয়েছে তুই জীবনে যদি কিছু পারিস তবে এমন কিছু করিস। সেদিন বাবার কাছ থেকে এমন কথা শুনে সত্যিই আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত হয়ে গিয়েছিলাম ।মনে হয় সেই দিন থেকে উদ্যোক্তা জীবন শুরু ।
তিনি বলেন একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়,বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।আমাদের সমাজে সফল ব্যবসায়ীর তালিকায় নারীর সংখ্যা খুব একটা নেই বললেই চলে। এর পিছনে বিভিন্ন ধরনের মানুষিক,পারিবারিক এবং সামাজিক কারন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তারপরেও কিছু কিছু নারী পিছপা হয়ে থাকেনি। সকল বাঁধা পেরিয়ে নিজেদেরকে সাফল্যের শিখরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। বর্তমানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা পূর্বের তুলনায় সহজ।
অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগে বস্ত্র, গয়না, সাংসারিক পণ্য, শিশুখাদ্য, প্রসাধনীর আধিক্য দেখা গেলেও সীমিতসংখ্যক সেবা ও প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো। এই মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের তুলনামূলক বেশি উপস্থিতি লক্ষণীয়। একটু গভীরে গেলেই বোঝা যায় যে সামাজিক, পারিবারিক দায়বদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা বিশেষ বাধা হয়ে দাঁড়ায় না বলে অনলাইন উদ্যোগে নারীদের এই স্বচ্ছন্দ পদচারণা।
দীর্ঘ কয়েক বছর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার পর নানা হিসাব–নিকাশ সেরে ভালো লাগার কাজটিতেই মনোযোগী হয়েছেন সেঁজুতি দাশ। নিজস্ব আগ্রহ ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন ক্রেতাবলয়, অর্জন করেছেন আস্থা। শুরুটা স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ না হলেও দুই বছরে তাঁর পোশাকভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গহনায় বাঙ্গালিয়ানা পেরিয়েছে অনেক দূর পথ।
সেঁজুতি মনে করেন, অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগগুলোকে এখনো অনেকেই সংসার সামলে অবসরে করা শখের কাজ ভাবে। শুরুতে তাঁর এমনও অভিজ্ঞতা হয়েছে, অনেকে তাঁর ব্যবসাটি ঘরকেন্দ্রিক ভেবে তেমন খরচের ব্যাপার নেই বলে ন্যায্য স্বীকৃতিটিও দেয়নি। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, যেকোনো সনাতনী পেশাজীবীর চেয়ে একজন উদ্যোক্তাকে তাঁর ব্যবসায় ভাবনা, শ্রম ও সময় কোনো অংশেই কম দিতে হয় না।তবে, অনলাইন ব্যবসার সুবিধাজনক দিক হলো ক্রেতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ যা ব্যবহার করে তাঁদের আস্থার জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব। আর তাঁদের নমনীয়তাও প্রশংসাসূচক বলেই উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।