বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৬ মামলার চার্জশিট কবে হবে?

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ৫৬ মামলার চার্জশিট কবে হবে?

 আমার বাংলা টিভি ডেস্ক : বেসিক ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে ২০১০ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় ১২০ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করা হয়। ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এসব মামলায়। বাকি ২ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনাগুলো এখনো অনুসন্ধান পর্যায়ে। আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা। বাকিরা ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকজরিপ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। তবে ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু বা পরিচালনা পর্ষদের কাউকে আসামি না করায় প্রশ্ন ওঠে সে সময়। প্রশ্ন ওঠে দুদকের অনুসন্ধান নিয়েও। কারণ ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনেও নিয়মবহির্ভূত ঋণ মঞ্জুর, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতার কথা ছিল।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট না দেওয়ায় বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের ডেকে ক্ষোভও জানিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের মে মাসের ওই শুনানিতে আদালত দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, কিছু ব্যক্তির কাছে যদি আপনারা মাথা নত করেন তাহলে এ ধরনের স্বাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে লাভ কী? যদি একজন কৃষকের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার টাকার ঋণের মামলা হতো, তাহলে মাজায় রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসা হতো। বেসিক ব্যাংকের বেলায় হচ্ছে না কেন? ঋণ নেওয়া টাকা খোঁজা হচ্ছে। কেয়ামত পর্যন্ত এ অর্থ খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেও সে সময় মন্তব্য করেন আদালত।

এদিকে দীর্ঘ সময়েও চার্জশিট না হওয়ার বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তো দেওয়ার কথা। কিন্তু এত দিনেও চার্জশিট দিতে না পারাটা দুদকের ব্যর্থতা। তারা নিজেরাই আইন মানছে না। এটা উচিত না। এরকম হলে মানুষের আস্থা থাকবে না। তাই দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, সরকার ব্যস্ত রাজনৈতিক মামলা নিয়ে। দুদক তো আইন মোতাবেক চলছে না। তারা আইন মোতাবেক চললে কোভিড নিয়ে এসব দুর্নীতি হতো না। সারা দেশে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে আইনের শাসনের জন্য। আইনের শাসন না থাকলে, গণতন্ত্র না থাকলে আমরা কেউ রেহাই পাব না।

দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, টাকার সর্বশেষ গন্তব্য বের করার চেষ্টা হচ্ছে। সেটা এখনো জানা যায়নি। এ জন্যই চার্জশিট দিতে দেরি হচ্ছে। দুদক আইনে ১৮০ দিনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সেটা নির্দেশনামূলক, বাধ্যতামূলক নয়। কবে নাগাদ হতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইলে এটা তদন্ত কর্মকর্তাদের বিষয় বলে জানান খুরশিদ আলম।
এছাড়া দুদকের পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, তদন্ত চলছে। তবে কবে নাগাদ চার্জশিট দেওয়া যাবে সেটা বলতে পারবো না।