চিকিৎসা বঞ্চনায় বাড়ছে মৃত্যু, অভিযোগ পাচ্ছে না প্রশাসন প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্সও বাতিল হবে

চিকিৎসা বঞ্চনায় বাড়ছে মৃত্যু, অভিযোগ পাচ্ছে না প্রশাসন। 

আমার বাংলা টিভি ডেস্কঃ চট্টগ্রামে চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছেই। প্রসূতি মা থেকে শুরু করে রাজনীতিবীদ কেউ বাদ পড়ছেন না। এ যেন সংকটের মধ্যে আরও এক সংকট। জেলা প্রশাসন ও সিএমপি ঘটা করে কমিটি গঠন আর হট লাইন সেবা চালু করলেও এখনো পর্যন্ত নাকি তাদের কাছে লিখিত কোনও অভিযোগই দেয়নি কেউ। তবে সিএমপির হট লাইনে ফোন করে গত ১১ দিনে কমপক্ষে ৫০ জনের বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতা নিয়েছেন।

জেলা প্রশাসন কমিটি গঠনের ১১ দিনের মাথায় ছয়টি বেসরকারি হাসপাতালে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলেও এতো দিন ধরে উঠা কোনও অভিযোগের সত্যতা পাননি বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। অন্যদিকে সিএমপির হট লাইন চালু আর অভিযোগ আহ্বান করলেও আনুষ্ঠানিক একটি অভিযোগও পায়নি সিএমপি। তবে প্রতিদিন ফেসবুক ও গণমাধ্যমে চট্টগ্রামে চিকিৎসা বঞ্চনিত হয়ে মৃত্যুর খবর আসছে অহরহ!

নগরীর হাসপাতালগুলোর দিকে থাকালে দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিদিন সরকারি ব্যসরকারি হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন অসংখ্য রোগী। কিন্তু কোনও হাসপাতালও তাদের ভর্তি পর্যন্ত করছে না। নানারকম অজুহাত দেখিয়ে তারা রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। ‘কখনো আইসিউ আবার কখনো চিকিৎসক নেই’ এমন সব অজুহাত দাঁড় করিয়ে হাসপাতালগুলো রোগীদের সাথে এমন অমানবিক ব্যবহার করছে।

গত ১০ জুন গর্বের সন্তানসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মুক্তা নামের এক গর্ববতী মা মারা যায়। একটি আইসিউ ও শ্বাসকষ্ট নিবারনের যন্ত্রের অভাবে গর্বের সন্তানসহ তিনি মারা যান। জানা যায়- ১৮ ঘন্টা চেষ্টা করেও পুরো চট্টগ্রামে মুক্তার জন্য মেলেনি একটি আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র)। সাতদিন পর বাচ্চা ডেলিভারির তারিখ থাকলেও এর মধ্যেই মুক্তার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। একপর্যায়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারি করার অনুরোধ জানানো হলে শ্বাসকষ্ট কমানো ছাড়া বাচ্চা ডেলিভারি করানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেয় চমেক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড। অতপর চিকিৎসার অভাবেই মুক্তা ও পৃথিবীর আলো না দেখা তার সন্তানের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

এর আগের গত ৯ জুন প্রথমে মেডিকেল সেন্টার,পরে মেট্রোপলিটন হাসপাতাল হয়ে পার্কভিউ হাসপাতালে ছোটাছুটি করেও চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু হয় চট্টগ্রামের এক আওয়ামী লীগ নেতার। চিকিৎসা দিতে কোনো হাসপাতালই বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি শফিউল আলম ছগীর নামের ৫৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে গ্রহণ করেনি। আইসিউ বন্ধ ও চিকিৎসক নেই অজুহাতেই তাকে এসব হাসপাতাল ভর্তি নেইনি। অতঃপর গাড়ির মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আওয়ামী লীগ নেতা ছগীর। এরকম অহরহ চিকিৎসা বঞ্চনার শিকারের খবর বের হচ্ছে।

এই দিকে চট্টগ্রাম টেরীবাজারের ব্যবসয়ী ও ব্যবসয়ী সমিতির উপদেষ্টা আবদুল মান্নানও বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। ব্যবসায়ীরা কিছুদিন আগে চিকিৎসা সংকট নিয়ে মানববন্ধনও করে ছিলেন।         amarbangla.tv

চিকিৎসা সেবা বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তবে এভাবে রোগী ফেরত দেওয়া কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। যেসমস্ত প্রতিষ্ঠান এভাবে রোগী ফেরত দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। হয়তো তারা মনে করছেন সরকার তাকিয়ে আছেন, সরকার এটি ধর্তব্যের মধ্যে নিচ্ছে। সময়মত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার থেকে প্রশাসন মোবাইল কোর্ট শুরু করবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্সও বাতিল হবে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস ও সাধারণ রোগী ভর্তি করানোর সরকারি নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছিল না। তাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও নন কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিতে একটি সার্ভিল্যান্স টিম গঠন করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকেও অভিযোগের জন্য একটি হটলাইন চালু করা হয়।

জেলা প্রশাসন বলছে, তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাৎক্ষণিক কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে তেমন কিছু চোখে পড়েনি। গত ১১ জুন ৫ টি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সব ঠিকঠাক চলছে বলে দেখতে পায় ভ্রাম্যমান। এরপরও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দ্রুত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

amarbangla.tv

নগর পুলিশ বলছে, তাদের হটলাইনে এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তির পরিবার চিকিৎসার সহযোগিতা চেয়ে ফোন করলেও কোনও লিখিত অভিযোগ দেননি। তাই কোনও হাসপাতালের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেনা৷

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আমার বাংলা ডট টিভিকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি। চট্টগ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর নজরদারি আছে। তবে আমাদের কাছে চিকিৎসা বঞ্চিত হয়েছে বা সেকারণে মারা গেছে এরকম কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতাম।

একই কথা বলছেন সিএমপির উপ কমিশনার (বিশেষ শাখা) আব্দুল ওয়ারিশ। তিনি আমার বাংলা ডট টিভিকে বলেন, ‌‘চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হওয়ার খবর পেয়ে আমরা হটলাইন সেবা চালু করে অভিযোগ আহ্বান করেছিলাম। তবে গত ৩১ মে থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ টির বেশি ফোন পেয়েছি সবগুলোই রোগী ভর্তিসহ নানা অনুরোধের। কেউই অভিযোগ করেনি অফিসিয়ালি। মানুষ যেভাবে অনুরোধ করছে আমরা সেভাবেই তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। কেউ কোনও থানায় চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেনি তাই আমাদেরও হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। শেয়ার করুন।