করোনা মুক্তির প্রার্থনায় জলে ভাসলো সাংগ্রাইয়ের পাইনছোঁয়াং ফুল বিজু

জলে ভাসলো সাংগ্রাইয়ের পাইনছোঁয়াং ফুল বিজু ।

আমার বাংলা টিভি ডেস্ক /রিপন মারমা (কাপ্তাই) রাঙ্গামাটি: করোনা কারণে সীমিত পরিসরে পার্বত্য চট্রগ্রাম রাঙামাটিতে বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি উদ্যেগে কাপ্তাই হ্রদের এবং কর্ণফুলী জলে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সাংগ্রাইয়ের পাইনছোঁয়াং বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠানিকতা।

করোনার শঙ্কার মধ্যেও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বৃহত্তম এই সামাজিক আয়োজনে ব্যস্ত থাকেন। মঙ্গলবার (১৩এপ্রিল) ফুল ভাসিয়ে করোনা থেকে মুক্তির জন্য গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয়।

৩০ চৈত্র মঙ্গলবার মারমা জনগোষ্ঠীর পাইনছোঁয়াং, চাকমা জনগোষ্ঠীর ফুল বিজু’, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ‘হাঁড়িবসু’ । পাইনছোঁয়াং ঠিক ফুলবিজু নামে অভিহিত না হলেও এইদিন প্রায় সব পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী পানিতে ফুল ভাসিয়ে দেয়।

সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাংগ্রাইয়ের পাইনছোঁয়াং ফুল বিজু উপলক্ষে রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ের রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, বরকল, নানিয়ানচর, বাঘাইছড়ি, কাউখালী, ইত্যাদি রাজবাড়ী চিৎমরম ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে নিজ নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পানিতে ফুল ভাসানো হয়।

উৎসবপ্রিয় পাহাড়িরা সারা বছর মেতে থাকেন নানান অনুষ্ঠানে। তবে তার সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় বর্ষ বিদায়ের এই উৎসব। চাকমারা বিজু, ত্রিপুরা বৈসুক, মারমারা সংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু এভাবে তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে আলাদাভাবে পালন করে এই উৎসব।

বৈসুকের ‘বৈ’ সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ ও বিজু, বিষু ও বিহুর ‘বি’ নিয়ে উৎসবটিকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ নামে পালন করা হয়। পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর থেকে পাহাড়ের সব জনগোষ্ঠীকে সম্মিলিত ভাবে উৎসবে একীভূত করার জন্য এই সংক্ষেপে নামটি প্রচলন করা হয়।

উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে এবং পবিত্র এই ফুল ভাসিয়ে দেয় পানিতে। তাই একে বলা হয় মারমাদের সাংগ্রাই পাইন ছোঁয়াং চাকমাদের ফুল বিজু। করোনা কারণে গত বছর কোনও আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও এবছর সীমিত পরিসরে ব্যক্তি উদ্যোগে সাংগ্রাইয়ের পাইনছোঁয়াং ফুল বিজু উৎসব পালন করা হয়।

পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ বেদনাই যেনো ভাসিয়ে দিয়ে নতুন দিনের সম্ভাবনার আলো জ্বালায় পাহাড়ের মানুষ। পানিতে ফুল ভাসিয়ে পুরনো দিনের বেদনা ভুলে নতুন দিনের প্রত্যয়ের কথা জানায় ফুল ভাসাতে আসা পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা।

সাচিংনু মারমা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের ঐহিত্যবাহী সামাজিক উৎসব। করোনা কারণে গত বছর উৎসবটি সেভাবে হয়নি। এবার নির্দেশনা মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বিশ্ব যেন করোনা মুক্তি পায় সেই প্রার্থনা করা হয় মা গঙ্গা দেবীর কাছে। আমরা যেন আগামী বছর সুন্দর করে আগের মতো উৎসবটি পালন করতে পারি।’

সপ্না মারমা এবং বিলি মারমা বলেন, সকালে খুব ভোরে ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজিয়ে এখন ফুল ভাসাতে এসেছি। ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ বেদনাকে ভাসিয়ে দিলাম এবং নতুন বছর যেন আরও অনেক সুন্দর হয়। করোনা থেকে দ্রুত বিশ্ব মুক্ত হোক। আমরা সবাই আবারও সম্ভাবিক জীবনে ফিরতে পারি সেই কামনা করি।

রকি মারমা বলেন, গত বছর করোনার কারণে কোনও আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হলেও হঠাৎ করোনা বৃদ্ধি পাওয়া সব স্থগিত করা হয়েছে। যে যার মতো বাড়ির আশেপাশে হ্রদের এবং কর্ণফুলী জলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফুল ভাসাচ্ছে।

মংচোহায় মারমা বলেন,ভোরে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের ফুল ভাসানো ও ফুল পূজার মধ্যে দিয়ে উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। খুব ভোরে পূর্ব আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ার আগেই মারমা চাকমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিশু-কিশোর,তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের সদস্যরা নদীতে ফুল ভাসিয়ে বিদায় বছরের দুঃখ-কষ্ট-গ্লানিকে বিদায় জানায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নেয়।