আয়নাসহ একটি বেসিন সেট স্থাপনে ২ লাখ টাকার আবদার!

 বেসিয়নাসহ একটি বেসিন সেট স্থাপনে (হাত ধোয়া কেন্দ্র) ২ লাখ টাকার আবদার করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। স্থানীয় বাজারে যা ২ থেকে ৬ হাজার টাকায় পাওয়া যায়।

‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ প্রকল্পের আওতায় এমন অস্বাভাবিক ব্যয় চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ১ হাজার ৮৮৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩২ কোটি ২৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংকের অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) ও এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি)।

প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪২৫টি বেসিন সেট স্থাপন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এগুলো স্থাপনে মোট ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার আবদার করা হয়েছে।

এছাড়া সাধারণ মানুষকে হাত ধোয়া শেখানোর জন্য প্রচারণা চালাতে ৪০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে জনসমাগমপূর্ণ স্থানে এবং বিদ্যালয়ে গুণগতমানের পরিচ্ছন্নতা পরিষেবা বাড়ানো হবে। এর ফলে পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ এবং করোনাসহ যে কোনো সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকানো সহজ হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে আয়নাসহ মাঝারি আকারের বেসিন সেট ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। তবে ভালো মানের সেট কিনতে গেলে খরচ একটু বেশি পড়বে। তারপরও ছয় হাজার টাকার বেশি নয়। যেমন, ২৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ১৮ ইঞ্চি প্রস্থের একটা বেসিন সেট ৬ হাজার টাকায় পাওয়া সম্ভব।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসিনের সঙ্গে ৫ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে পানির মোটর ও ৭ হাজার টাকায় ১ হাজার লিটারের পানির ট্যাংকি স্থাপন করলেও ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়।

ডিপিএইচ বলছে, তারা নিজেরাই কংক্রিটের বেসিন তৈরি করে দেবে। আর ২ লাখ টাকার মধ্যে টিউবওয়েলসহ অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। কিন্তু প্রকল্প প্রস্তাবনায় তা উল্লেখ করা হয়নি।

নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভালো মানের স্টার সিরামিকের বেসিন স্ট্যান্ডের দাম ৩ হাজার ৫০০ টাকা, আফজাল মেটালের কলের দাম ১ হাজার ১৫০ টাকা, বেসিন ওয়েস্টের দাম ২৫০, বেসিন ম্যাজিক ৫০, অ্যাঙ্গেল চিফ ৬৫০, গ্লাসের সেলফ ৪০০, আয়না ৩৫০ ও কানেকশন পাইপের দাম ৭০ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ পড়ে ৫ হাজার ৯৭০ টাকা।

বাজারে থাই বেসিন সেটের দাম ১২ হাজার টাকার মধ্যে। আর সবচেয়ে দামি জার্মান প্রযুক্তির বেসিন সেটের দাম সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা। যেগুলো শুধু বিলাসবহুল ভবনের ব্যক্তিগত রেস্ট রুমেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

নগরীর উত্তর বাড্ডার মেসার্স ভাই ভাই স্যানিটারি এজেন্সির মোছলেম উদ্দিন। দীর্ঘদিন ধরে সব ধরনের স্যানিটারি পণ্য খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতা এবং সরবরাহকারী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেসিন ২ হাজার টাকা থেকে শুরু। ভালো মানের বেসিন ৬ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। দুই লাখ টাকা কখনই হতে পারে না। মোটর ও পানির ট্যাংকিসহ অবকাঠামো নির্মাণ করতে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস বলেন, “প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভা হয়েছে। আমরা অনেক খাতে ব্যয় কমাতে বলেছি। আরও সভা হবে। ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সব সময় কাজ করে কমিশন। ”

সূত্র জানায়, প্রকল্পের ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রকল্পের ‘রেসপন্স টু কোভিড-১৯ স্যানিটেশন ফ্যাসিলিটিজ/সাপ্লাইস, হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশন উইথ রানিং ওয়াটার অ্যাট স্কুল অ্যান্ড পাবলিক প্লেস’ খাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। যেখানে মাত্র ৬ হাজার টাকায় একটি হাত ধোয়া কেন্দ্র স্থাপন করা যায় সেখানে ২ লাখ টাকা ব্যয়কে বিলাসী বলে উল্লেখ করেছে কমিশন।

দেশের ১৮টি জেলার ৭৮ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

ডিপিএইচই সূত্র জানায়, শুধু হাত ধোয়ার স্টেশন নয়, এর পাশাপাশি টিউবওয়েল বসানো হবে। তবে প্রকল্প প্রস্তাবনায় তা উল্লেখ করা হয়নি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিকল্পনা সার্কেল) মো. আনোয়ার ইউসুফ বলেন, “প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। একটা পিইসি সভাও হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন যেভাবে বলবে সেইভাবে আবারও প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। ”

হাত ধোয়া কেন্দ্র স্থাপনে বাড়তি ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু হাত ধোয়া কেন্দ্র নয়, টিউবওয়েলও স্থাপন করা হবে। যে কারণে ২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

দরিদ্র মানুষের আচরণ পরিবর্তনে প্রায় ৪০ কোটি টাকা চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে হাত ধোয়া শেখানোর জন্য জনসমাগম স্থলে নানা ধরনের প্রচারণা চালানো হবে।