সিলেটে আ’লীগ কাউন্সিলরের বাসায় ১২৫ বস্তা ত্রাণের চাল

 

জব্দ ত্রাণের চাল

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাতের আঁধারে জোর করে নেওয়া গাড়িভর্তি ত্রাণের ১২৫ বস্তা চাল কাউন্সিলরের বাসা থেকে উদ্ধার করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।

শুক্রবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে সিসিকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর এ কে এ লায়েকের মুন্সিপাড়া বাসা থেকে চালগুলো উদ্ধার করা হয়।

সিসিকের দুই কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাব ইন্সপেক্টর হুমায়ন কবীর ও পিন্টু রায় ১২৫ বস্তা চাল সিসিকের গাড়িতে করে নিয়ে আসেন।

সিসিক সূত্র জানায়, গত বুধবার রাত ১১টার দিকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েকের বিরুদ্ধে অনেকটা জোর করেই ১২৫ বস্তা চাল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এ ব্যাপারে ত্রাণ গ্রহণ ও বণ্টন শাখায় নিয়োজিত সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন বলেন, ওইরাতে ত্রাণ গ্রহণের ঝামেলা থাকায় গাড়িতে থাকা ১২৫ বস্তা চালের গাড়িটি নিয়ম না মেনে নিয়ে যান ওই কাউন্সিলর। বিষয়টি বিদ্যুৎ শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আলমকে জানিয়ে ১২৫ বস্তা চাল নিয়েছেন মর্মে উপস্থিত ওই কাউন্সিলরের স্ত্রীর স্বাক্ষর রেখেছি।

তিনি বলেন, বিষয়টি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের জানালেও তিনি চালের গাড়ি ফেরত দেননি। এরপরও স্থানীয় আওয়ামী লীগের মাধ্যমে সার্ভে করে দেখা গেছে ১ হাজার ৫৩৮ পরিবার আছে ওই ওয়ার্ডে। আর সিসিকের সার্ভেতে এসেছে ১৮শ পরিবারের হিসাব। এরপরও ওই কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে বাড়তি হিসেবে ২ হাজার ৫শ প্যাকেট দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত বুধবার (১ এপ্রিল) রাতে নগর ভবনের ফটক থেকে ত্রাণের চালভর্তি গাড়িটি নিজ বাসায় নিয়ে যান ওই কাউন্সিলর। এটা যথারীতি শৃঙ্খলাপরিপন্থি।

তিনি বলেন, ওই কাউন্সিলরকে তার ওয়ার্ডের দরিদ্র মানুষের তালিকা দিতে বললে তিনি সাড়ে ৬ হাজার পরিবারের তালিকা জমা দেন সিসিকে। যা ভোটারের থেকেও বেশি হতে পারে। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাবেক কাউন্সিলরদের দিয়ে সার্ভেমতে ওই ওয়ার্ডে ১ হাজার ৫৩৮ পরিবার রয়েছে, যারা ত্রাণ পেতে পারেন। এরপরও তাকে ২৫০০টি প্যাকেট বাড়তি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএ লায়েক বলেন, আমাকে তালিকা দিতে বলা হয়েছিল। তাই ওয়ার্ডের ৬ হাজার ৫শ পরিবারের তালিকা দিয়েছি। তারা বিতরণের জন্য বুধবার রাতে একটি গাড়িতে ১২৫ বস্তা চাল পাঠিয়েছিলেন। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধিসহ দু’জন কর্মকর্তার কাছে চালগুলো ফেরত দিয়েছি। তারা বুঝে পেয়েছেন বলে লিখিত দিয়ে গেছেন। এছাড়া আমার ওয়ার্ডে ২ হাজার ৫শ প্যাকেট ত্রাণ দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জোর করে ত্রাণের চাল আনার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি ওখানে যাইনি। নিজের স্ত্রীর নাম গোপন রেখে বলেন, চাল আরেকজন রিসিভ করে এনেছেন।

সিসিক সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাস ইস্যুতে ঘরবন্দি কর্মহীন মানুষের সাহায্যার্থে ফান্ড গঠন করে সাহায্যের আহ্বান জানান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ সহযোগিতা করেন নগরের বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ী। সরকার থেকেও ১০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয় সিসিকে। সেই সঙ্গে সিসিকের তহবিল থেকে ক্রয় এবং ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেলি-পেশার মানুষের অনুদানে বড় হয়ে ওঠে সিসিকের ত্রাণভাণ্ডার।

সিসিকের তথ্য অনুযায়ী, ত্রাণ জমা হয়েছে ৩৭৬.৬৫ টন চাল, ১৭১.৫৪ টন আলু, ৭৯.৫০ টন পেঁয়াজ, ৭৫.৪৭ টন ডাল, ৭১.৫৭ টন তেল, ৪৯.৫ টন লবন ছাড়াও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ১০০ টন চাল বরাদ্দ আসে।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আরো বলেন, এই ত্রাণ থেকে প্রতি পরিবার ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি করে তেল, ডাল, লবণ ও সাবান, মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। ২৭টি ওয়ার্ডে ৬৮ হাজার পরিবারকে ত্রাণ দেওয়ার কথা থাকলেও শনিবার (৪ এপ্রিল) পর্যন্ত ২৭ ওয়ার্ডের ৭৯ হাজার পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া সম্পন্ন হবে।

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার (৩ এপ্রিল) রাতে এক অফিস আদেশ জারি করেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এতে বলা সিসিকের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের স্ব স্ব ওয়ার্ডে বসবাসরত হতদরিদ্র নাগরিকের মধ্যে বরাদ্দ ত্রাণ সামগ্রী সমভাবে বণ্টন করার অনুরোধ জানানো হয়। কোনো ভাবেই স্ব স্ব ওয়ার্ড বহির্ভূত এলাকায় এবং ভোটারভিত্তিক তা বণ্টন করা যাবে না।