রাঙ্গামাটিতে করোনা ভাইরাসের কারণে সাংগ্রাই জলকেলী উৎসব স্থগিত
রিপন মারমা রাঙ্গামাটিঃ চৈত্র মাস আসলে কিংবা কোকিলের কুহু কুহু ডাকে পাহাড়ে পাহাড়িদের মনে জাগে ঐতিহ্য সাংগ্রাই আমেজ । পুরাতন বছরের কালিমা ধুয়ে নতুন বছরকে স্বাগতম জানানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে ওঠে পাহাড়িরা।উৎসবের গুঞ্জিত হয় তিন জেলা পাহাড়ি গ্রাম। বছরের শেষ দুই দিন এবং নতুন বছরে প্রথম দিনকে বরণ করে নেয়ার জন্য মারমা, চাকমা,তংচঙ্গ্যা,ত্রিপুরা,রাখাইন, সহ অন্যান্য পাহাড়িরা আয়োজন করে থাকেন নানান কর্মসূচী।
বিশেষ ভাবে রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি,বান্দরবান এই তিন জেলাতে উৎসবের মেঠে ওঠে পাহাড়িরা।পুরাতন বছর থেকে নতুন বছরের দিকে অতিক্রমন উপলক্ষ্যে উদযাপিত মারমা জন জাতির উৎসবের নাম ’সাংগ্রাই’ নামটি এসেছে সংস্কৃতি শব্দ সংক্রান্তি থেকে যার অর্থ পরিগমণ বা পরিবর্তন অর্থাৎ একটি বছর শেষ হয়ে আরেকটি বছরে বা নতুন দিনে পর্দাপনের বিশেষ ক্ষণকে বুঝায় মূলত সাংগ্রাই বা নতুন বছরে পর্দাপনের এই ক্ষণ ৩-৫ দিন ব্যাপি হয়ে থাকে।
প্রথম দিনকে বলা হত আঞো বা পাইছোঁয়াই,দ্বিতীয় দিনকে বলা হত আক্যা ও, তৃতীয় দিনকে আ:ঞাই, ও ৪তুর্থ দিনকে আটাডা বলা হয়।এর পর ৫ম দিবসে গিয়ে মূলত: প্রথম দিবস ধরা হয় যার টার্মিনলজি হচ্ছে হ্নইছাইং পার্বত্য চট্রগ্রামের মারমাদের পাশাপাশি রাখাইন সম্প্রদায়ও মৈত্রি – জল বর্ষণ যা কলিকিয়ালি জলকেলী বলা হয় যাকে প্রধান অনুসঙ্গ করে সাংগ্রেং,বার্মা’রা উচ্চারণ করে থিংগেন।সচরাচর খ্রিষ্টীয় মাস এপ্রিলের মাঝামাঝিতে এই নববর্ষের উপলক্ষটা উপস্থাপন হয়।আরাকানসহ গোটা বার্মায় একই উৎসব চলে সপ্তাধিক সময় ব্যাপি।
জলকেলী ও অন্যান্য মাঙ্গলিক উপাদানের মাধ্যমে এ উৎসব প্রায় প্রতিটি দক্ষিন ও দক্ষিন –পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত ,তন্মধ্যে মায়ানমার ছাড়া ও লাউস, ক্যাম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডে সংক্রাণ নামে রাষ্ট্রীয় ভাবে পালিত হয়।
সাংগ্রাই এর অনুষঙ্গঃ মূলত :জল, ফুল,খেলা ধুলা ও উন্নত খাদ্য দ্রব্য। জল ব্যাবহ্নত হয় পুরাতন দিনে অপবিত্র ও অশুভ আশয় গুলো ধুয়ে মুছে নতুন ও পবিত্র দিনের স্বাগত নিবেদনের সিম্বলি উপাদান হিসেবে। সামাজীক ভাবে বর্তমানের এ মহেন্দ্রক্ষণের মূলত যুবক যুবতীরা এই জল একের অপরের দিকে নিক্ষেপের মাধ্যমেই উপভোগ্য একটি জলকেলী পরিবেশ তৈরি করে থাকে।
অনেক স্থানের এই দিনের বয়োজ্যেষ্ঠদের জল দিয়ে স্নান করার পুরাতন রীতি এখনো অল্প চোখে পরে।একই পবিত্র উপাদান হিসেবে ধর্মীয় চেতনার শুভক্ষণ নিবেদনের এই জল দিয়ে অহিংস নীতি পুরোধা গৌতম বৌদ্ধের মূর্তিকে স্নান পূর্বক পরিষ্কার করা হয়। এই সাংগ্রাই মূল দিনে।সাংগ্রাই পালনের ৩ দিনের প্রথম দিনের মারমারা ফুল দিয়ে ঘড় বাড়ি ঘড়ডোর সাজাই।পাশাপাশি ঘরে ঘরে উন্নত খাবার ও তৈরি করা হয় যা দিয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সহ ধর্মীয় মঠগুলোতে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়।
পাড়ায় ও মহল্লা এসময় বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলাও আয়োজন করা হয়।কোন কোন জায়গা রাত ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী পালাগান আধুনিক গান মারমা সংস্কুতি যাত্রাপালা আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াতে এবছরে তিন জেলাতে সামাজীক উৎসব গুলো স্থগিত করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে প্রথম সপ্তাহের পরে পাহাড়িরা ব্যাস্ত থাকেন উৎসবের বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে, সেখানে এই বছর ঘড় বন্দি হয়ে আছে নীরবে।তবে কেউ চাইলে সীমিত পরিমানে পারিবারি ভাবে পালন করতে পারবে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা।
এই বিষয়ের রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা আমার বাংলা ডট টিভিকে জানান,প্রতি বছরে পাহাড়ি সম্প্রদায় তাঁদের প্রধান সামাজীক উৎসব বৈসুক,সাংগ্রাই,বিজু,বিষু,বিহু, ধুমধানের সহিত পালন করে থাকে।কিন্তু করোনা ভাইরাস(কোভিট-১৯)এর কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এবছর (২০২০ সাল) বিজু,সাংগ্রাঁই,বৈসুক, বিষু, বিহু, পালনের বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি রাঙ্গামাটি হেডম্যান এসোসিয়েশনের এর পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন তবে কেউ চাইলে সীমিত পরিমানে পারিবারি ভাবে পালন করতে পারেন। আমি জেলার সকল হেডম্যান ও কার্বারিদেরকে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারে নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানাচ্ছি।এছাড়া দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, আমরা তাদের শোক প্রকাশ করে পরিবারে সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। যারা চিকিৎসাধিন আছেন তাঁদের আরোগ্য কামনা করছি।