ফিরে আসুক পৃথিবীর প্রাণ, মীর নাজমিন

ফিরে আসুক পৃথিবীর প্রাণ, মীর নাজমিন

আমার বাংলা টিভি প্রতিবেদকঃ সময়েই সবকিছু সুন্দর।আর পরিমিত শব্দটা তো জীবনের সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।সেই ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে আজতক প্রতিদিন সকালবেলা রুটিন মেনে ঘুম থেকে উঠা,তারপর রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হতে হতে খুব একঘেয়েমি এসে যেত মাঝেমাঝে। কেবলই মনে হত টানা কিছুদিন যদি বন্ধ পেতাম কতোই না ভালো হত!চাকরি জীবনে প্রবেশের পরও একটা দিন যদি বন্ধ পেতাম অনেক ভালো লাগত।

টানা কয়েকদিন বন্ধ পাব জানার পর বন্ধের দিনগুলো কখন আসবে কখন আসবে সেকি অপেক্ষা!বন্ধের আগের দিনটাকে মনে হত চাঁদ রাত।এত বেশি খুশি লাগতো। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করার পরও যখন বিশ্বের বিভিন্ন এলাকা বিভিন্ন শহর যখন একের পর এক লকডাউন করে দিচ্ছে তখনো আফসোস করছিলাম আমাদের দেশে কেন এখনো বন্ধ দিচ্ছে না?অবশেষে মার্চের ১৭তারিখ যখন দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩১মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হল খুশি মনে বাসায় ফিরে এলাম।রমজানের সময় ছাড়া সচরাচর এত দীর্ঘ বন্ধ পাওয়া যায় না।

রমজানের দিনগুলোতে সারাদিন রোজা রাখা,নামাজ কালাম নিয়েই সবাই ব্যস্ত থাকে।এই সময়গুলো তাই একটু অন্যরকম কাটে।কিন্তু এই বন্ধের শুরুতে বাসার সবাইকে নিয়ে খুব ভালোই কাটছিল দিনগুলো।সবাই সারাক্ষণ বাসায় থাকাতে অনেক আনন্দ অনেক হইচই।তখনো করোনা এতবেশি ছড়ায়নি দেশে।তাই খুব একটা ভাবনাও ছিল না সেটা নিয়ে।প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানোর মজাটাই যে আলাদা, হোম কোয়ারেন্টিনের দিনগুলোতে সেটা আরেকবার উপলব্ধি করলাম।ভালোই কেটেছিল প্রথম ক’দিন।

কিন্তু দেশে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করার কারণে পর্যায়ক্রমে বন্ধ যখন কেবল বেড়েই চলছে মন থেকে উবে গেল বন্ধের সেই মজাটা।সারাক্ষণ মাথার মধ্যে,মনের মধ্যে একটা ভয় একটা আতঙ্ক কাজ করছে।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তো আছেই।নিজের প্রিয় দেশের কথা,দেশের মানুষের কথা ভেবে ভীষণ খারাপ লাগছে।আজ এতজন আক্রান্ত কাল এতজন আক্রান্ত,আজ এতজন মরছে,কাল এতজন মরছে শুনে শুনে মনের ভেতর একটা ভয় আতংক সারাক্ষণ ঝেঁকে বসেছে।amarbangl.tv

সবাই মনেপ্রাণে আল্লাহকে ডাকছি।সময়মত নামাজ কালাম,কোরআন তেলাওয়াত করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি। কিন্তু এত দুঃশ্চিন্তার মধ্যেও একটা স্বস্তি ছিল প্রাণের চট্টগ্রামে কোন করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি এতদিন। সর্বশেষ যখন চট্টগ্রামেও করোনা আক্রান্ত পাওয়ার খবর শুনলাম, তখন থেকে মনে হতে লাগল নিজের ঘরের দ্বারেই এসে গেছে করোনা!এই বুঝি আমাদেরও আক্রমণ করে বসল!সারাক্ষণ শুধু ভয় আর ভয়।সামান্য একটু সর্দিকাশি হলেও বুকটা ধুক করে উঠছে।সামান্য একটু গলাব্যথা বা জ্বর হলেও ভয়ে কুঁকড়ে উঠছে বুকের ভেতরটা।

এই বুঝি করোনা আমাদেরও পেয়ে বসল!একেকটা মৃত্যুর খবর শুনে, একেকটা আক্রান্তের খবর শুনতে শুনতে মনে হচ্ছে শারীরিক মানসিকভাবে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়ছি।আত্মীয় স্বজনেরও খবরাখবর নিচ্ছি মাঝেমাঝে।এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ঘরের ভেতর আবদ্ধ থাকতে থাকতে একেবারে দম বন্ধ অবস্থা।বারবার ভাবছি দিনের পর দিন যারা বাসার মধ্যে থেকেই কাটাচ্ছে, কিভাবে থাকেন তারা?কিভাবে তাদের সময় কাটে!আসলে পৃথিবীতে অন্ধকার না থাকলে যেমন আলোর মূল্য বুঝা যেত না,মন্দ না থাকলে যেমন ভালোর মূল্য বুঝা যেত না,ঠিক তেমনি দিনের পর দিন এভাবে গৃহবন্দি না থাকলে মুক্তির যে কি সুখ সেটাও হয়ত বুঝতে পারতাম না কোনদিন।

প্রতিদিন ঘরের বাইরে যাওয়া বা প্রতিদিনের গতবাঁধা জীবনটাকে এতদিন বিরক্তিকর মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে কখন পৃথিবী আবার সুস্থ হয়ে উঠবে?কবে আবার সেই জীবনে ফিরে যাব?নিজের প্রিয় কর্মস্থল, প্রিয় সহকর্মী সবাইকে অনেক মনে পড়ছে।সবচেয়ে বেশি মিস করছি নিজের কাজটাকে।ভোরে ঘুম থেকে উঠা,বাসা থেকে সকালে বের হওয়াটা মাঝেমাঝে ক্লান্তিকর মনে হলেও কখন যে নিজের কাজটাকে এতটা ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি!শুধু মনে হচ্ছে আবার আমি স্কুলে ফিরে যাই,আবার আমার সেই প্রিয় কচিমুখগুলোর মুক্তোঝরা হাসি দেখি।আবার ফিরে যাই সেই বাঁধনহারা দিনগুলোতে।

মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে মনেপ্রাণে প্রার্থনা করছি,পৃথিবী থেকে খুব শীঘ্রই করোনা নামক মহামারীর নিপাত যাক।সমস্ত জরাজীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে পৃথিবী আবার সুস্থ হয়ে উঠুক।প্রকৃতি আবারো পূর্বের সেই প্রাণ ফিরে পাক। আর মানুষ ফিরে পাক তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। অপেক্ষায় আছি পৃথিবী জুড়ে আবার প্রাণ ফিরে আসার,,,