জীবনের চেয়ে জীবিকাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
আমার বাংলা টিভি ডেস্কঃ দেশে এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণের মাত্রা উর্ধ্বমুখী। তবে অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার কথা বিবেচনা করে টানা ৬৬ দিন পর অফিস খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা প্রতিরোধে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি ও বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এসব নির্দেশনা মেনে অফিস ও ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করবেন সাধারণ মানুষ।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অফিস ও যানবাহন চলাচল শুরু করায় দেশ বড় সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়লো বলে অনেকেই মনে করছেন। যারা অফিসে আসছেন তারা জানান, জীবিকার প্রয়োজন ও চাকরি হারানোর আতঙ্কে অফিসে আসছি। করো মনে শান্তি নেই। সবাই আতঙ্কের মাঝে আছি।
বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও ব্যবসার সাথে জড়িত প্রত্যেকেই মনে করছেন লকডাউন কোনও সমাধান নয়। তবুও জীবনের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করলে ভালো হতো। কিন্তু এখানে জীবনের চেয়ে জীবিকাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
রূপায়ণ হাউজিং এর এজিএম মো. ইক্তাদুল ইসলাম আকন্দ জানান, ৬৬ দিন ধরে দেশব্যাপী মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু জীবনের সাথে জীবিকা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিভাগগুলোর মতামত হচ্ছে এই ভাইরাস আরও অনেকদিন চলবে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতি যেমন ধ্বংস হবে, তেমনি বেকার হয়ে পড়বে লাখ লাখ মানুষ। তবে এই পরিস্থিতিতে অফিসে আসা কারও জন্য আনন্দদায়ক নয়। সবাই আতঙ্ক ও ভয় নিয়েই অফিস করছেন। তবে প্রণোদনা দিয়ে বা কোনোভাবে এই লকডাউন আরও কিছুদিন চলমান রাখলে হয়তো আরও কিছু সুফল আসতো। তবে আমি বলতে চাই এই দুর্যোগকালে করোনাকে সাথে নিয়েই চলার কৌশল আমাদের সৃষ্টি করে নিতে হবে।
লকডাউন উঠিয়ে নেয়া হোক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক এই দাবিগুলো অনেক আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা করে আসছেন। এখন লকডাউন তুলে নেয়ার ফলে তাদের স্বস্তি ফিরে আসলেও আতঙ্ক আগের চেয়ে বেশি বেড়েছে। এখন বেশি সংখ্যক মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে, আর সংক্রমণেরও আশঙ্কা বাড়বে। স্ট্যান্ডার্ড টেডিং এর সিইও মোহাম্মদ সাদেক জানান, ঘরে ভেতর আটকে মরে যাওয়া ও বাইরে গুলি খেয়ে মরে যাওয়া এই দুই পর্যায়ে রয়েছে দেশের মানুষ। সেজন্য ব্যবসায়ীরা মনে করছেন বাইরে থেকে যুদ্ধ করেই আমরা মরবো, ঘরে বন্দী হয়ে মরতে চাই না। তবে যে সামাজিক দূরত্ব মেনে অফিস ও চলাচলের কথা বলা হচ্ছে তা কোনও ভাবেই সম্ভব না। যা ফেরি ঘাট, ট্রেন স্টেশন বা বাস স্টেশনের চিত্রগুলো দেখলেই সহজেই বুঝা যায়। তবে ঘরে বন্দী থাকলেই যে করোনা আক্রান্ত হবো না তার কোনও নিশ্চয়তা এখনও কেউ দিতে পারে নাই।
তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা এখনও আবিষ্কার হয়নি। কেউ আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার কতটুকু হতে পারে সে বিষয়ে সবাই অবগত। কিন্তু কিভাবে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয় তার একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো দরকার। এবিষয়টি যদি স্পষ্ট থাকে তাহলে মানুষ যথাযথভাবে সতর্ক থাকতে পারবে।
এ বিষয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের ম্যানেজার কোর আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার মো. ফখরুল আলম বলেন, ব্যাংকে যারা চাকরি করছেন তারা এতোদিন সীমিত পরিসরে সেবা দিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন ফুলটাইম সেবা কার্যক্রম চালু হওয়ায় সবার মাঝে আতঙ্ক ও ভয় কাজ করছে। আর স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় এখন আক্রান্ত বেশি হবে। তবে জীবন জীবিকা অব্যহত রাখতে হবে। তাই করোনাকে জয় করেই আমার চলার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। সেজন্য সরকারের দেয়া ফর্মুলা মেনে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
ঢাকায় কম্পিউটার সিটি টেকনোলজি লি. এর টেনো সেল ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন মো. জিয়াউল হক। তিনি জানান, লকডাউন এমন সময় উঠিয়ে নেয়া হলো যখন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এখন অফিসে যেমন মানুষের ভীর বাড়বে। তেমনি অফিসের আশেপাশের দোকান, খাবার দোকান ও চা এর দোকানগুলোতেও ভীর হবে। এছাড়া যানবাহনের বিষয়টি তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে ভয়ের মাঝেই চাকরি করে যাচ্ছি সবাই। কারণ সবার মাঝে করোনার সাথে চাকরি হারানোর ভয়টিও যে কাজ করছে। আমাদের সময়। শেয়ার করুন।