জিয়ার কাছ থেকে ১০০ রিকশার লাইসেন্স নিয়েছিলেন মান্না

জিয়ার কাছ থেকে ১০০ রিকশার লাইসেন্স নিয়েছিলেন মান্না।

জাফর ওয়াজেদ/আমার বাংলা টিভি ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ছিলেন। তাঁকে হত্যার তিনবছর দশ মাসের মাথায় ঘাতকদের পৃষ্ঠপোষক ক্ষমতাধরের সামনে দাঁড়িয়ে চ্যান্সেলর হত্যার বিচার চেয়েছিল চার সাহসী ছাত্র। বলেছিল,জাতির জনক ও চ্যান্সেলর হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ আসবে না। ছাত্র সমাজ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তারা আন্দোলন গড়ে তুলবে। অতএব বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে।

কালো চশমা চোখের ঠান্ডা মাথার খুনীটির বাকী অবয়বে ক্রোধ জেগেছিলো বুঝি। ১৯৭৯ সালের ২৫জুলাই বঙ্গভবনে এই দৃশ্য রচিত হয়েছিল।

১৯৭৯ এর ৯মে ডাকসু নির্বাচন হয়। ১৯টি আসনের মধ্যে মান্না-আখতার পায় ১৫আসন, কাদের-রবিউল পর্ষদ ৪টি আসন। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলদার জেনারেল জিয়া চ্যান্সেলর বনে যান। ঢাবিতে এর আগে ইটাঘাত খাওয়া তার সাধ হয় ডাকসুর নির্বাচিতদের চেহারা মুবারক দেখার। আমন্ত্রণ আসে ভিসির মাধ্যমে। amarbangla.tv

মান্না-আকতার রাজি হয়। চারজন আপত্তি করে যে শিক্ষামন্ত্রী ৭১এর কোলাবরেটর শাহ আজিজ থাকতে পারবে না। ৪ জনের চাপাচাপিতে মান্নারাও তা মেনে নেয়। আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুল মালেক উকিলের অনুমতি পাবার পর ৪ জন বৈঠক তথা ইফতার পার্টিতে যেতে রাজি হয়।

যাবার আগে ডাকসুর বৈঠকের আলোচনায় ৪ জন প্রস্তাব করে – চ্যান্সেলার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্মিলিতভাবে চাওয়া হবে। মান্নারা রাজি হয়নি। চারজন দাবীতে অনড় থেকে জানায় তারা এই দাবীর জন্যই যাচ্ছে। মান্না বিশ্ববিদ্যালয় বহির্ভূত কর্ণেল তাহের হত্যার বিচার দাবীর প্রস্তাব চাপাতে চায়।

বঙ্গভবনে ডাকসুর সভাপতি উপাচার্য ফজলুল হালিম চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রেজিষ্ট্রার সৈয়দ বদরুদ্দিন হুসাইন ছিলেন দলে। গণভবনে জেনারেল রাষ্ট্রপতি, শিক্ষাসচিব কাজী ফজলুর রহমান, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আবুল বাতেন, স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আর উর্দিপরা ক’জন ছিলেন।

ডাকসুর মান্না, আকতার, মনজুরুল ইসলাম, নুরুল আকতার, ওয়াহিদুজ্জামান পিন্টু, আলী রীয়াজ, গোলামকুদ্দুস সহ জাসদের ১৫জন এবং মুজিববাদী বলে পরিচিত দলের মন্জুর কাদের কোরাইশী, কামালশরীফ, এনায়েতউল্লাহ এবং আমি জাফর ওয়াজেদ।

সারিবদ্ধভাবে গোল হয়ে দাঁড়ানোদের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন জেনারেল জিয়া। পরপর দাঁড়ানো জাসদের ১৫জন কর্ণেল তাহের হত্যার বিচার চায়। মান্নারা বলে তাহেরকে কেন ফাসিঁ দেওযা হয়েছিল, রব-জলিল জেলে কেন? বাকশালীদের বিচার কেন হয না। একজন বলেন হলে থাকার সীট কম – ছাদ দিয়ে পানি পড়ে।

জিয়া মান্নাদের বলেন – তাহের আমার সাথে যুদ্ধ করেছে। সে ছিল সরল মানুষ। তাকে সামনে রেখে কিছু দৃষ্কৃতকারী দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। অফিসার ও সেনাদের হত্যা করেছে। আলী রীয়াজ প্রশ্ন করেন – তাহলের প্রকাশ্যে তার বিচার হলো না কেন?

শেষ প্রান্তে দাঁড়ানো আমরা চারজন। বুকে যাদের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির ব্যাজ, তারা পরপর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবি করি হাত মেলাবার সময়।

চারজন পৃথকভাবে বলি – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যার বিচার না হলে শিক্ষাঙ্গনসহ দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ আসবে না। প্রশ্ন করি – জেল হত্যা তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন রেডিও বাংলাদেশ হলো। ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে লোকজন কী করে ঘোরা ফেরা করে? হলে পানি সংকট ইত্যাদি৷

ডাকসুর পুরো কমিটি সেদিন বিচার চাইলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো। সংকীর্ণও হীনমনাদের জন্য তা হয়নি।

বগুড়ার সন্তান জিয়া বগুড়ার মান্নাকে অদূরে ডেকে নিয়ে মিনিট দশেক কথা বলেন। বেরিয়ে আসার পর মান্না উষ্মাপ্রকাশ করেছিলেন আমাদের প্রতি। ক’দিন পর ক্যাম্পাসে রটে যায় মান্না ১০০টি রিক্সার লাইসেন্স পেযেছেন। আজ অনেক বছর পর করোনাকালে মনে এলো এসব। পরবর্তীতে এমনও শ্লোগান হতো—”বঙ্গভবন থেকে এলো গাই / সঙ্গে বাছুর মান্নাভাই”৷

আরো মনে আসে, যে মামলায় তাহেরের ফাঁসি হয়, সেই একই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মান্না এক বছরের মাথায় সবার আগে ছাড়া পায়৷ ফেসবুক থেকে, আমাদের সময়। শেয়ার করুন।