গরু খামার উদ্যোক্তা চিংসা মারমা।
আমার বাংলা টিভি ডেস্ক /রিপন মারমা (রাঙ্গামাটি): নতুন পুরনো সব উদ্যোক্তারাই ঝুঁকির মুখে পড়েছেন, তবে এর মধ্যে যারা একেবারেই নতুন করে শুরু করেছিলেন তাদের কার্যত পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
এদের মধ্যে কেউ কৃষি খামার করেছেন আবার কেউ বা শুধু গরুর খামার। কেউবা দেশী ঐতিহ্যবাহী খাবারের ব্যবসা। বাংলাদেশে নতুন উদ্যোক্তার সংখ্যা আনুমানিক কত তার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়না। তবে দেশের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশের প্রায় ২৭ লাখ বেকার আছে এবং এ বেকারদের মধ্যে ৩৯ ভাগই মোটামুটি শিক্ষিত বেকার এসব বেকারদের মধ্যে একদল উদ্যমী যেমন নিজেরা কিছু করার চেষ্টা থেকে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তেমনি আবার তরুণদের অনেকে নিজের অন্য ব্যবসার পাশাপাশিও নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছেন, বিনিয়োগ করেছে অর্থ।
তার ধারাবাহিকতা রাঙ্গামাটি কাপ্তাই ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কইংমারা (কুকিমারা) লোটাস পাড়া গ্রামের মৃত পাইন্দা মারমা ছেলে চিংসা ভাই মারমা তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়েছিলেন উদ্যোক্তা হবার জন্য। উদ্যোক্তা হয়েও তিনি এখন নিঃস্ব। ত্রিশ বছর আগে সেসময় ছিল প্রতিদিনই রাত পোহানোর প্রতীক্ষায় থাকেন চিংসা ভাই মারমা দিনের শুরুতে ঝড়-বৃষ্টির আভাস না পেলে ধারালো দা নিয়ে বাড়ির থেকে বের হন কর্মের সন্ধানে।
খালি পায়ে ধারালো দা হাতে নিয়ে গ্রামের রাস্তায় পা বাড়াতেই ডাক পড়ে চিংসা ভাই এর সুউচ্চ গাছ থেকে নারিকেল কিংবা সুপারি পাড়ার জন্য এতো কদর তার।
চিংসা ভাই মারমা গাছ চিনিয়ে দেওয়া মাত্রই পরনের লুঙ্গি কাঁছা দিয়ে মিনিট তিনেকের মধ্যেই উঠে পড়েন গাছের মাথায়। এরপর গাছ মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী ডাব-নারিকেলের কাদি কেটে দেওয়া, অপ্রয়োজনীয় পাতা, ছোবরা কেটে পরিষ্কার করে নেমে আসেন তিনি।
এরপর একের পর এক গাছে উঠে একই ভাবে নারিকেল ও সুপারি পাড়েন চিংসা ভাই মারমা।
অবশেষে প্রতিটি নারিকেল গাছের নারিকেল পাড়া ও পরিষ্কার করার জন্য একটি করে নারিকেল নিয়ে অন্য এলাকার দিকে পা বাড়ান তিনি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই চলে, তবুও যেন কষ্টের ছাপ নেই চিংসা ভাই মুখে।
চিংসা ভাই মারমা জানান,প্রতিমাসে গাছে উঠে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করতাম সেসময়ে। এই টাকায় সংসার চালাতে পেরে অন্য রকম তৃপ্তি খুঁজে পাই। আর সারাদিন কষ্টের কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে গোসল-খাওয়া শেষে সন্ধ্যায় পাশের বড়ুইছড়ি বাজারে গিয়ে চায়ের দোকানে বসে বসে এক দুই কাপ চা পান করতেই রাজ্যের শান্তি মিলে।চিংসা ভাই মারমা তিন ছেলে সন্তান রয়েছে এক ছেলে চট্রগ্রাম বেসরকারি এক কোম্পানিতে চাকরি করেন।দ্বিতীয় আরেক ছেলে প্রবাসী ওমানের থাকেন ছোট ছেলে তম্ব পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন।
গাছে ওঠায় জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কেন এই পেশা বেছে নিয়েছেন জানতে চাইলে চিংসা ভাই বলেন,সব কাজেই ঝুঁকি রয়েছে। জীবনে বাঁচার তাগিদে অনেক সময় ঝুঁকি নিতে হয়।
কর্মের সন্ধানে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেয়ে গাছে উঠে জীবিকা নির্বাহ করা অনেক কম ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে করেন চিংসা ভাই মারমা।
কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মৃত পাইন্দা মারমা ছেলে চিংসা ভাই মারমা (৫৫) স্ত্রী’র হ্লাসাইন্দা মারমা(৫০) চিংসা ভাই আরোও বলেন, ছোট বেলায় প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরুতে পারিনি। তখন থেকেই গাছকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছি। বর্তমানে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি নারিকেল গাছ ও ১০ থেকে ১৫টি সুপারি গাছে উঠি। প্রতিটি নারিকেল গাছে উঠলে একটি করে নারিকেল পাই। ওই নারিকেল ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করতাম।এখন যেহেতু বয়স হয়েছে আমি চিন্তা করলাম যে টাকা গুলো সঞ্চয় হিসেবে জমিয়েছি সে টাকা দিয়ে মুরগী এবং গরু, ছাগল কিনব। আসতে আসতে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সপ্ন দেখলাম তবে সপ্নগুলো বাস্তব করা জন্য সঞ্চয় টাকা দিয়ে ১ টি গরু এবং ১ টি ছাগল দুইটি মুরগী নিয়ে ছিলাম। ১০-১৫ বছরে গরু এবং হাস মুরগী সংখ্যাও বাড়ল ভাল চলে যাচ্ছিল দিনকাল আসতে আসতে লাভের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছি দুই একর একটি জায়গা কিনেছি পাশাপাশি সে জায়গাটি মধ্যে আম, লিচু, নারিকেল, জাম, কলাগাছসহ বিভিন্ন ফলে গাছ লাগিয়েছি।
ভাগ্যের কি পরিহাস বেশি দিন সে সম্বলগুলো ঠিকলোনা গত, ২০১৭ সালে পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গাতে পাহাড় ধস হয়ে অনেক মানুষ মাটি চাপা পরে মারা যায়।সেসময়ে আমার যা কিছু ছিল সব পাহাড় ধসে কবলে পরে তচনচ হয়ে গেছে সেসময় আমার মনে হয়েছিল আমার মাথার উপরে আকাশটা যেন ভেঙে পড়ল কি করবো এখন কে আমার পাশে দাড়াবে এখনতো আমি শুন্য হয়ে গেছি অর্থ সংকটে কারনে আমি এখন নিঃশ্ব আমি আর কি উদ্যোক্তা হতে পারবোনা।
সরকারে কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি দাবি জানান,তার দু-সময়ে যেন জেলা উপজেলা প্রসাসন থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ এবং উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন ইনজো সংস্থা থেকে যেন সহযোগিতা করেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানতে পারি রাঙ্গামাটি কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়ন কইংমারা (কুকিমারা) ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার অংচাপ্রু মারমা তিনি জানান, লোটাস গ্রামের একটি সুউচ্চ সুপারি গাছে উঠে সুপারি পাড়া হলে ওই গাছ থেকে লাফ দিয়ে পাশের আরেকটি গাছে চলে যেতে পারত সেই।
তিনি আরোও সাংবাদিকদের বলেন, ত্রিশ বছর ধরে চিংসা ভাই মারমা এই পেশায় বেছে নিয়েছিল।তিনি আমাদের চোখের সামনে অনেক কষ্টের জীবন-যাপন করেছেন তার কষ্টের জীবন গুলো অনুভব করলে গাঁ শেউরে উঠে তার অক্লান্ত পরিশ্রমে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে।
আসলে খুব কর্মস্থলের মানুষ চিংসা ভাই মারমা আমার ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা। ওনার অভিরান পথচলা খুবিই কষ্ট ছিল বলতে গেলে ওনার আগে কিছু ছিলনা একটা ঘর ভিতা ছাড়া। ওনি আজকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আন্ত প্রকাশ পেয়েছেন। তার গরু ছাগল পালন মধ্য দিয়ে সফলতার অর্জন করেছে নিজের দুই একর জায়গায় ক্রয় করে করেছে সেই জায়গাতে তিনি আম, কলা, লিচু পাশাপাশি মিশ্রণ বাগান একটি গড় তুলেছেন।