আমার বাংলা TV: পুলিশ মনে করছে রাজধানীর বনানীতে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক সিদ্দিক মুন্সি হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। এ হত্যাকাণ্ডে ছয় থেকে সাত যুবক অংশ নেয়। তাদের মধ্যে চারজন অফিসে ঢুকে সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয়। বাকিরা বনানীর বি-ব্লকের ৪ নম্বর সড়কে ওই অফিসের সামনে পাহারা দেয়। মঙ্গলবার রাতের ওই হত্যাকাণ্ডের অর্ধ শতাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এসব ফুটেজ দেখে পুলিশের ধারণা, ঘাতকরা সবাই পেশাদার এবং এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় সিদ্দিকের স্ত্রী জোসনা বেগম বাদী হয়ে বনানী থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এদিকে ময়নাতদন্তের পর সিদ্দিকের লাশ জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় তার লাশ দাফন করা হবে।
বনানীর ৪ নম্বর সড়ক ও বিভিন্ন ভবনের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন ঘাতকদের চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ফুটেজে দেখা যায়, ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ঘাতকরা চলন-বলনে বেশ স্মার্ট। তারা ধীর পায়ে রিক্রুটিং এজেন্সি ‘এস মুন্সি ওভারসিজে’ প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে এবং পরে তারা ধীর পায়ে আবার ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনার পর বনানী থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। একই সঙ্গে ঘাতকদের সন্ধানে মাঠে নেমেছে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম। পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বুধবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, ব্যবসায়ী সিদ্দিকের অফিস ও এর আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে হত্যাকাণ্ডের ক্লু বের করার কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, খুনিরা সবাই মুখোশ পরা ছিল। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি আরও বলেন, কিসের বিরোধে এ হত্যাকাণ্ড, সেটি জানতে পুলিশ কাজ করছে। চাঁদা না দেয়ায় হত্যা করা হয়েছে বলে সিদ্দিকের পরিবারের সদস্যদের দাবিও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
সিদ্দিকের স্ত্রী জোসনা বেগম মামলায় কারো নাম উল্লেখ করেননি। তবে তার স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক এজেন্টের বিরোধের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। ওই এজেন্ট সিদ্দিকের কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করেছিল বলেও তিনি জানান। আর এ কারণে সিদ্দিক দুই মাস আগে উত্তরা (পূর্ব) থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ব্যবসায়ী সিদ্দিক হত্যা মামলার তদন্ত থানা পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, অর্ধশতাধিক ফুটেজ থেকে সন্দেহভাজন ঘাতকদের শনাক্ত করা গেছে। এখন তাদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, সিসি ফুটেজে ঘাতকদের মুভমেন্ট দেখে পেশাদার বলে মনে হয়েছে। তার ভাষায়, অর্থের বিনিময়ে ওই ব্যবসায়ীকে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, তবে এর বাইরে ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক দ্বন্দ্বও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
সিদ্দিকের ছোট ভাই আবদুল লতিফ জানান, দুই দশক ধরে তার ভাই জনশক্তি রফতানির ব্যবসা করছেন। তার প্রতিষ্ঠান থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ছেলে মেহেদী হাসান (১২), মেয়ে সাবিহা সিদ্দিক (৯) ও স্ত্রীকে নিয়ে সিদ্দিক উত্তরা চার নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডে ২৪ নম্বর বাসায় থাকতেন। সম্প্রতি বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানার সঙ্গে আবু হানিফের বিয়ে হয়েছে। হানিফ প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিভাগ দেখাশোনা করেন। জামাতা হানিফ বুধবার বলেন, এক এজেন্ট কিছু লোকের কাছ থেকে টাকা নেন। তবে ওই টাকার পুরোটা অফিসে জমা না দেয়ায় তাদের বিদেশ পাঠানো সম্ভব হয়নি। মূল টাকা ফেরত দেয়ার পরও ওই এজেন্ট ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ লাখ টাকা দাবি করে। ওই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এজেন্ট তার শ্বশুর সিদ্দিককে নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। এ ঘটনায় তার শ্বশুর দুই মাস আগে উত্তরা (পূর্ব) থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
আমার বাংলা নিউজ টিভি/১৬ নভেম্বর/২০১৭